অজয় পাল
মার্চ ০৫, ২০২২
০১:৪৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ০৫, ২০২২
০১:৫১ পূর্বাহ্ন
আনোয়ার হোসেন রানা
এক সময় সিলেট নগরীর তালতলায় সমমনা বন্ধুদের নিয়ে একটি আড্ডাস্থল গড়ে উঠেছিলো । সেখানে প্রতিদিনের আড্ডায় নিয়মিত মুখ ছিলেন কম করে হলেও গোটা দশজন । সেই স্মৃতিময় আড্ডার অনেক মুখ-ই আজ আর ইহ জগতে বেঁচে নেই । সর্বশেষ চলে গেলো আনোয়ার হোসেন রানাও । সম্ভবত আমি, শাহরুখ আহমেদ সাক্কু ও মুহিবুর রহমান ছাবু-ই কেবল বেঁচেবর্তে আছি । মনে পড়ছে না, এই আড্ডার আর কেউ বেঁচে আছে বলে ।
রানা ছিলো আমার প্রিয় মানুষদের অন্যতম। তার সাথে আমার অনেক অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমাদের পরিবারের সাথেও তার ছিলো মধুর সম্পর্ক। সুনামগঞ্জে আমার শশুর বাড়ি। বিয়ের সময় তার গাড়ীটি-ই সাজানো হয়েছিলো বর-এর গাড়ী হিসেবে। নববধূ নিয়ে সিলেটে ফেরাও সেই একই গাড়ীতে চেপে।
রানা সবসময় দ্রুতবেগে গাড়ী চালাতো। আমি প্রায় সময় বাঁধা দিতাম। এই অভ্যাসটার কারণে ছোটোখাটো দুর্ঘটনাও কম ঘটায় নি। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই দ্রুত গাড়ী চালানোর কারণেই একদিন আমরা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। কি ভাবে? বিয়ের পর নববধূ নিয়ে ওর গাড়ীতে চেপেই সিলেটে ফিরছি। রানা সজোরে গাড়ী চালাচ্ছিলো। জাউয়ার কাছে একটি সড়ক সেতু অতিক্রম করা মাত্রই মুহূর্তের ব্যবধানে সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে। আমরা বেঁচে যাই অলৌকিক ভাবে।
প্রবাস জীবনের কারণে দীর্ঘ ষোল বছর রানাকে দেখিনি। তবে ফোনে কথা হয়েছে অনেক দিন। তারপরও আমার উপর তার অভিমান ছিলো। সিলেট নগরীর প্রিয়মুখ এই রানার পরিবারের সাথেও আমার খুবই মধুর সম্পর্ক ছিলো। তার পিতার কাছেও অামি স্নেহের পাত্র ছিলাম। ওদের ব্যবসাস্থল হীরা এন্ড কোম্পানিতে বসে পিতা-পুত্রের সাথে বহু দিন বহু সময় কাটিয়েছি গালগল্প করে। অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন রানা ছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির একজন অগ্রসর সৈনিক। সিলেট আবাহনী ক্রীড়াচক্রের ছিলো অন্যতম উপদেষ্টা। দুই বাংলার বিখ্যাত কথা সাহিত্যিকদের প্রচুর মূল্যবান বই তাকে পাঠ করতে দেখেছি। আশির দশকে তার সাথে শান্তি নিকেতন ঘুরে বেড়ানোর আনন্দময় দিনের স্মৃতি এখনো আমার মানসপটে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই সবই আজ স্মৃতির অনুষঙ্গ।
ওপারেও ভালো থাকিস রানা। তোকে ভুলবো না কোনোদিন। তোর চলে যাবার খবরে এই মুহূর্তে আমাদের গোটা পরিবার এখন শোকে
মুহ্যমান। ঈশ্বর তোর আত্মার চির শান্তি নিশ্চিত করুন।
এএফ/০২