জকিগঞ্জে হয়রানি করতে গলাকাটা নাটকের অভিযোগ

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি


মার্চ ২৬, ২০২১
০২:৫৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৬, ২০২১
০২:৫৪ পূর্বাহ্ন



জকিগঞ্জে হয়রানি করতে গলাকাটা নাটকের অভিযোগ

সিলেটের জকিগঞ্জে 'গলাকাটা নাটক' সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন গোটারগ্রামের হয়রানির শিকার দু'টি পরিবার ও তাদের স্বজনসহ এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ৩ নম্বর কাজলসার ইউনিয়নের গোটারগ্রাম ত্রিমোহনীতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গোটারগ্রামের এবাদুর রহমানকে 'গলাকাটা নাটকের' রূপকার ও একজন চিহ্নিত প্রতারক দাবি করে তার ছেলে মিজানুর রহমান ফয়ছল কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা থেকে পরিত্রানের দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত রবিবার (২১ মার্চ) রাত পৌনে ৮টার দিকে দক্ষিণ গোটারগ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে এবাদুর রহমানের গলাকাটার ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও সাজানো নাটক। তাৎক্ষণিক এলাকাবাসীসহ কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারলেও সময়ের ব্যাবধানে তা এখন সবার নিকট পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে গলাকাটার নাটক সাজিয়ে এবাদুর রহমান এলাকার লোকজনকে হয়রানি করে যাচ্ছেন। কথিত গলাকাটার ঘটনার পর ওই রাতে নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তি গোটারগ্রামের মৃত ফয়জুর রহমানের ছেলে মোস্তাক আহমদ ও আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল বাছিতকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এতে হতভম্ব হয়ে যান এবাদুর রহমানের পক্ষের প্রতিবাদকারীরাও। পরে জানা যায়, তাদের নামোল্লেখ করে এবাদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এলাকার নিরীহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করানোর পর এবাদুর রহমানের নাটকের মুখোশ উন্মোচন হয়। বেরিয়ে আসে ঘটনাটি একটি প্রভাবশালী চক্রের সাজানো ও পূর্বপরিকল্পিত নাটক, যা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সর্বত্র। সামনে আসে এবাদুর রহমানের সৃষ্ট এমন অনেক প্রতারণামূলক কাহিনীও।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী মোস্তাক আহমদের ভাই মাওলানা আফতাব উদ্দিন ও আব্দুল বাছিতের ভাই সোহেল আহমদ সাজানো, হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত মোস্তাক আহমদ ও আব্দুল বাছিতকে সম্পূর্ণ নির্দোষ উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেওয়ার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মোস্তাক আহমদ ঘটনার সময় স্থানীয় রতনগঞ্জ বাজারে ছিলেন। রতনগঞ্জ বাজারে বহু লোকজন তাকে দেখেছেন। অপর আসামি আব্দুল বাছিত ঘটনার সময় গোটারগ্রাম ত্রিমোহনীতে অবস্থান করছিলেন। এলাকার শত শত লোক প্রত্যক্ষদর্শী। অথচ অতীতের বহু প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত এবাদুর রহমান একটি লোমহর্ষক ঘটনা সাজিয়ে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে দু'জন নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন। এমন অকল্পনীয় ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী হতবাক হয়েছেন।

তারা এবাদুর রহমানের এহেন মিথ্যা নাটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মূল রহস্য উদঘাটন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া পুলিশ আর কাউকে যেন গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করে। এবাদুর রহমান এলাকার নিরীহ আরও অনেককে ফাঁসানোর পাঁয়তারা করছেন। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জকিগঞ্জ থানা পুলিশের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ঘটনা যখন ঘটেছে তখন সন্ধ্যা রাত। গ্রামাঞ্চলে এই সময়ে রাস্তাঘাটে অহরহ মানুষ চলাচল করেন। এবাদুর রহমানকে যেখান থেকে কথিত 'গলাকাটা' অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, সে জায়গাটি একটি জনবহুল এলাকা। চারদিকে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। ঘটনার একেবারেই পাশে ব্যস্ততম আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়ক। সেখানে এত বড় ঘটনা ঘটলেও পাশের বাড়ি বা রাস্তায় চলাচলকারী একটি লোকও ঘটনাটি দেখেনি কিংবা কোনো ধরনের চিৎকার শোনেনি! ঘটনাস্থলে নেই ধস্তাধস্তি ও রক্তের কোনো চিহ্ন। শত্রুতামূলকভাবে তাকে কেউ মেরে ফেলতে চাইলে গলার রগ বা শ্বাসনালী কেটে ফেলত। কিন্তু প্রকৃতভাবে এবাদুর রহমানের গলার পাশের উপরের চামড়া আর একটু মাংস কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, এবাদুর রহমানের ওপর কোনো আক্রমণ হয়নি। একটি প্রভাবশালী চক্রের মিশন বাস্তবায়নে বড় অংকের টাকা নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে এ কাহিনি সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগেও অনেকভাবে নিরীহ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবাদুর। কখনও আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়ে নাটক করে থাকেন তিনি। গভীরে তদন্ত করলে এবাদুর রহমানের অসংখ্য হয়রানি ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া যাবে। সম্প্রতি ‘গলাকাটা’ নাটকের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও গ্রেপ্তারকৃতদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া এবং এবাদুর রহমানের কথায় নতুন করে কাউকে হয়রানি না করতে এলাকাবাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে হয়রানির শিকার দু'টি পরিবারের লোকজন ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার শতাধিক লোক উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ জানান।

এবাদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান ফয়সলের দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় অন্যতম সাক্ষী বদরুল হক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে জানান, যাদেরকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা কোনোভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। পূর্বশত্রুতার রেশ মেটাতে গলাকাটার ঘটনা সাজিয়ে তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। এবাদুর রহমানের নানা কর্মকাণ্ডে সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে ‘গলাকাটার’ ঘটনা সাজানো। তিনি সাক্ষী হলেও জানতেন না এজাহারে গ্রেপ্তারকৃত মোস্তাক আহমদ ও আব্দুল বাসিতকে আসামি করা হয়েছে। জানলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করতেন বলে দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবেড় সভাপতি খায়ের, সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত পাল, যুগ্ম-সম্পাদক রহমত আলী হেলালী, কোষাধ্যক্ষ এনামুল হক মুন্না, আল হাসিব তাপাদার, মোর্শেদ আহমদ লস্কর, জকিগঞ্জ আই টিভি ও জকিগঞ্জ টিভির প্রতিনিধি দল, বিভিন্ন পোর্টালের সংবাদকর্মীরা, কাজলসার ইউনিয়নের সদস্য কফিল উদ্দিন, নারী সদস্য রোশনা বেগম, সাবেক সদস্য আব্দুস সালামসহ গণ্যমান্য শতাধিক ব্যক্তিবর্গ।

সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম খাঁনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এবাদুর রহমানের জবানবন্দি ও তার ছেলের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন করতে গভীর তদন্ত করবে। যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তে যদি ঘটনা সাজানো বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে এর পেছনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

 

ওএফ/আরআর-১৩