ছেলের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ মায়ের

বালাগঞ্জ প্রতিনিধি


মার্চ ২১, ২০২১
০১:২৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২১, ২০২১
০১:২৬ পূর্বাহ্ন



ছেলের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ মায়ের

সিলেটের বালাগঞ্জে সৎ ছেলের হয়রানি ও নির্যাতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এক বৃদ্ধা। সম্পত্তির লোভে সৎ ছেলে বৃদ্ধার পরিবারকে সাজানো মামলার ভয় দেখিয়ে ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের জব্বার মিয়ার স্ত্রী সিরাজুন বেগম বাদী হয়ে সৎ ছেলে লিটনের বিরুদ্ধে প্রথমে বালাগঞ্জ থানায় ও গত ১৬ মার্চ সিলেটের পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, জব্বার মিয়া মারা যাওয়ার পূর্বে ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ১৩৫ নম্বর দলিল সম্পাদন করে ৯ বিঘা জমি ছেলে আল আমিনের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। স্ত্রী সিরাজুন বেগম স্বামীর রেজিস্ট্রি করে দেওয়া বসতবাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। হাজেরা বেগম নামে জব্বারের আরও একজন স্ত্রী থাকলেও স্বামীর অবাধ্য হওয়ায় তাকে তালাক দেন জব্বার। ছেলে লিটনকে রেখে হাজেরা পিত্রালয়ে চলে যান, তার অন্যত্র বিয়েও হয়। মা চলে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই লিটন তার বাবাসহ পরিবারের লোকজনকে নির্যাতন করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রায় সাড়ে তিন বছর পূর্বে জব্বার মিয়া মারা যাওয়ার পর লিটন স্ত্রী ও মাকে নিয়ে পিতার বাড়িতে উঠলে মানবিক বিবেচনায় তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়। বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েই জোর করে সম্পত্তি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন লিটনসহ তার মা ও স্ত্রী। গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর লিটনসহ তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সৎ মা সিরাজুন ও তার ছেলে আল আমীনের ওপর হামলা করে তাদের মারাত্মকভাবে আহত করেন। ওইদিন সিরাজুনের ঘরে ঢুকে জব্বার মিয়ার ব্রিটিশ পাসপোর্টসহ ৩টি পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে যান লিটন।

এ ঘটনায় সিরাজুন বাদী হয়ে বালাগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সালিশকারীরা বৈঠকে বসে উভয়পক্ষের সম্মতিতে একটি চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। চুক্তিপত্রে বলা হয়েছিল, আল আমীন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তার নামে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে ৩ শতক ভূমি সৎ ভাই লিটনকে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে। চুক্তিপত্র সম্পাদনের ৬ মাসের মধ্যে লিটনকে ওই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। কিন্তু লিটন সেই শর্ত মানেননি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে লিটনের সহযোগী জারমানসহ তার মা ও স্ত্রী মিলে সৎ মা সিরাজুন ও তার মেয়েকে মারধর করে আহত করেন। এ ঘটনায় সিরাজুনের ছেলে আল আমীন বাদী হয়ে লিটনসহ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে বালাগঞ্জ থানায় অভিযোগ দাখিল করেন, যেটি তদন্তাধীন রয়েছে। 

এদিকে, অভিযোগ দেওয়ার পর সিরাজুনের পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করায় তার স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। লিটন হুমকি দিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন বড় ধরনের ক্ষতি না করে তিনি এ বাড়ি থেকে যাবেন না বলে অভিযোগে প্রকাশ।

এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুহিন মনসুরসহ সালিশকারীরা বলেন, লিটন মিয়া সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত না মানায় বিষয়টি সমাধান হয়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজির মিয়া বলেন, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাদের মধ্যকার বিরোধটি নিষ্পত্তি হয়নি। তবে কার কারণে সেটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে তা আমার জানা নেই।

আর লিটন মিয়া অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমার বাবার বহুবিবাহ থাকায় আমরা একাধিক ভাই-বোন রয়েছি। আমি সবাইকে নিয়ে একত্রে বসবাসের চেষ্টা করছি। তারা ষড়যন্ত্র করে আল আমীনের নামে দলিল করায় আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা বালাগঞ্জ থানার এসআই রাজিব চৌধুরী ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটা ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ। আদালতের নির্দেশ নিয়ে তদন্ত চলমান আছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

 

এসএ/আরআর-০৮