স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা, সিলেটে বাড়ছে সংক্রমণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


মার্চ ১৬, ২০২১
০৪:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ১৬, ২০২১
০৪:৫০ পূর্বাহ্ন



স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা, সিলেটে বাড়ছে সংক্রমণ

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। শনাক্ত রোগী বাড়ছে সিলেটেও। কিন্তু সেই তুলনায় সচেতনতা বাড়ছে না। উল্টো মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমছে। ফলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

রবিবার (১৪ মার্চ) দেশে করোনায় সংক্রমিত ১ হাজার ১৫৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন; যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সিলেটেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায়ের কোনো দিক-নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় সংক্রমণ বাড়ার কয়েক সপ্তাহ পর সিলেটে সংক্রমণ বাড়ে। তাই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। 

রবিবার (১৪ মার্চ) সরেজমিন সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক দূরত্ব বজায়ের কোনো দিক-নির্দেশনা মানছেন না। পথচারীরা একে অপরের শরীরের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাচল করছেন। বাজারগুলোতেও শত শত মানুষ জটলা বেঁধে কেনা-বেচা করছেন। এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা মাস্কও পরছেন না অনেকে। সবাইকে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত পাড়া, শপিং মল কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। চলছে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানও। আয়োজন করা হচ্ছে মেলাও। মাস্ক না পরেই এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বেশিরভাগ লোক। 

নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় কথা হয় পথচারী শরিফ আহমদের সঙ্গে। মাস্ক না পরার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিলেটে তো করোনা নেই। এছাড়া মাস্ক পরে চলাচল করা অস্বস্থিকর। তাই মাস্ক পরছি না।’ আরেক পথচারী রুবেল মিয়া বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহার করা উচিত কিন্তু আজকে বাসায় ফেলে এসেছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জানা গেছে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলতি মাসে ১৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রবিবার সিলেট বিভাগের আরও ৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা গত ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। রবিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ১৬ হাজার ৪৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। 

সিলেটে গত বছরের ৫ এপ্রিল প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। তবে এ সময় রোগী শনাক্তের হার ছিল কম। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ জন করে রোগী শনাক্ত হন। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে। এ বছরের মার্চ মাস থেকে সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আবারও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এছাড়া যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরন (স্ট্রেইন) ছড়িয়ে পড়েছে সেটি সিলেটেও শনাক্ত হয়েছে। সিলেটের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সরাসরি ফ্লাইট থাকায় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘আগেও দেখা গেছে ঢাকায় সংক্রমণ বাড়ার কয়েক সপ্তাহ পর সিলেটে সংক্রমণ বাড়ে। এছাড়া শীতের সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস-এ, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস-বি এরকম কয়েকটা ভাইরাস সক্রিয় থাকে। ফলে অনেকেই এ সময় জ্বর-সর্দিতে ভোগেন। একটি ভাইরাস যখন শরীরে সক্রিয় থাকে তখন অন্য ভাইরাস শরীরে ঢুকতে পারে না। ফলে শীতে করোনার প্রকোপ অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে অনেক কম ছিল। তবে শীত কমার কারণে অন্যান্য ভাইরাসগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় এখন করোনার সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরন সিলেটে শনাক্ত হলেও এর মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়ছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ এমনটি হলে সংক্রমণের মাত্রা আরও বেশি হতো। তবে মাস্ক পরিধান না করলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এই গরমে আবারও বাড়তে পারে সংক্রমণ।’

সিলেট করোনা আইসোশেন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত ২ সপ্তাহ আগে হাসপাতালে ১৫-২০ জনের মতো রোগী থাকতেন। কিন্তু গত ২ সপ্তাহে তা বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে ৪০ জন রোগী ভর্তি আছেন।’

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় হাসপাতালে আবারও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ওপর জোর দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সবক্ষেত্রে সবার মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আ ন ম বদরুদ্দোজা সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরাও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে আমরা আবারও প্রচারে নামব। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে।’

এনএইচ/বিএ-১৯