উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
মার্চ ১১, ২০২১
১২:২৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১১, ২০২১
১২:২৯ পূর্বাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগরে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভারী যান চলাচলের কারণে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক। এমন অবস্থায় অকাল বন্যাসহ আসন্ন বর্ষায় কয়েক হাজার একর বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, সাদিপুর ইউনিয়নের তাজপুর এলাকার ৪টি স্থানে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে শতাধিক কোটি টাকার কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ব্লক তৈরি করছে ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত প্রায় ৩ মাস ধরে ঠিকাদারদের সিমেন্ট, বালু ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ভারী যানবাহন কুশিয়ারা ডাইকের উপর দিয়ে যাতায়াত করছে। ভারী এবং অধিক যান চলাচলের কারণে ডাইকটি দেড় থেকে দুই ফুট দেবে গেছে।
এদিকে এ ডাইক সংস্কারে বর্তমানে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২০ লক্ষাধিক টাকার কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভারী যান চলাচলের কারণে চলমান ডাইক সংস্কার কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
২০০৪ সালে ভয়াবহ বন্যার পর এলাকার ফসল ও কয়েক শতাধিক গ্রামকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে কুশিয়ারা ডাউক (বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ কাম রাস্তা) নির্মাণ করা হয়। ওসমানীনগরের সাদিপুর ইউনিয়নে কালনিরচর পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটারসহ ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাইক নির্মাণের ৫ বছরের মধ্যেই তা দেবে গিয়ে স্থানে স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। ২০১০ সালে কুশিয়ারা নদীর পানি ডাইকের নিচু অংশ দিয়ে ঢুকে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত করে। এরপর প্রতি বর্ষা মৌসুমে ওসমানীনগরে কিছু এলাকা নিয়মিত প্লাবিত হতে থাকে। ২০১৭ সালে তাজপুর এলাকায় বাঁধ উপচে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি ও দীর্ঘ জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। ডাইক নির্মাণের দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ডাইকের ঝুঁকিপূর্ণ দেড় কিলোমিটার সংস্কার করা হয়। এরপরও ২০১৯ সালে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সংস্কারের বাইরে থাকা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি করে এবং গতবছর বাঁধের ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করলে এলাকাবাসী বিচ্ছিন্নভাবে নিজ উদ্যোগে মাটি ও বালির বস্তা ফেলে ফসল রক্ষা করেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমদিকে কাভার্ড ভ্যানসহ ভারী যান দিয়ে সিমেন্ট, বালু ও পাথরসহ মালামাল আনতে শুরু করে। এলাকাবাসী এবং প্রশাসনের বাধায় দিনে এসব যান চলাচল বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে এমন বাহন দিয়ে মালামাল আনা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন বালু-পাথর বোঝাই অসংখ্য ট্রাক বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কবির উদ্দিন আহমদ বলেন, 'বড় বড় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলাচলের কারণে ইতোমধ্যে কুশিয়ারা ডাইকের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সরকার কুশিয়ারা নদীর ভাঙন থেকে নদীর তীরবর্তীদের রক্ষার্থে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু উক্ত কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বহীনতার কারণে কুশিয়ারা ডাইকটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আগাম বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে শতাধিক গ্রাম।'
সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম বারি বলেন, 'ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে কুশিয়ারা ডাইক দেড় থেকে দুই ফুট দেবে গেছে। বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।'
ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, 'কুশিয়ারা ডাইকের যেভাবে বেহাল হয়েছে, তাতে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। এমনটি হলে এলাকার হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যাবে।'
ইউডি/আরআর-০২