শহীদ আহমদ চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ
মার্চ ০৪, ২০২১
০২:১৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ০৪, ২০২১
০২:২৬ পূর্বাহ্ন
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের বালি ও মাটি অবাধে বিক্রি করে নদীর পাড় ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে অবৈধ পন্থায় লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্য করছে ভূমিদস্যুরা। আর এর প্রধান হোতা হিসেবে স্থানীয় মানিকোনা এলাকার ফরিদের নাম ছড়িয়ে পড়েছে মুখে মুখে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে দিনে ও রাতে বিক্রি হচ্ছে এসব বালি ও মাটি। ভূমিদস্যুরা ক্ষমতাশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে সম্প্রতি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মানিকোনা বাজার খেয়াঘাটে গেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, আশ্বিন মাস থেকে নদীর পানি কমতে থাকে, জাগতে থাকে নদীর চর। পানি যত কমে, চর তত ভেসে ওঠে।
কুশিয়ারা নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নদীর বুকজুড়ে বিশাল চর জেগে উঠেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ছোট হয়ে এসেছে নদী, জেগেছে বিশাল চর। আর সেই সূযোগ কাজে লাগিয়ে কার্তিক মাস থেকে অবাধে বালি ও মাটি বিক্রি করে চলেছে ভূমিদস্যুরা। আগে রাতে নৌকা দিয়ে বেশি বালি ও মাটি চালান করা হতো। এখন গাড়িতে বেশি হয় এবং তা চলে ভোর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত। শুধু চর নয়, কুশিয়ারা নদীর দুই পাড় অবাধে কেটে কেউ কেউ সেই মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করছেন বলেও জানান স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, উজানের চরে বালি-মাটি বিক্রি হচ্ছে আর প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
দেখা যায়, নদীর পাড় ঘেঁষে কাটা হচ্ছে মাটি আর নিচে অবাধে চলছে বালি বিক্রি। আগে বেশিরভাগ বালি-মাটি নৌকায় করে বিক্রি হতো। এখন পানি তলানিতে থাকায় নৌকায় কম বিক্রি হচ্ছে এবং ট্রলি ও পিকআপে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে জড়িত থাকায় ভয়ে তারা কারও নাম বলতে রাজি হননি।
স্থানীয় বাসিন্দা লিটন বিশ্বাস বলেন, 'ফরিদ নামের এক ব্যক্তি এসব বালি তোলেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রমে। ফরিদ এসব বালি ও মাটি বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।'
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক প্রবীণ বলেন, 'এখানে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি হয়েছে। তারা এই বালি ও মাটির ব্যবসার মূলহোতা।'
উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য ফাতেহা বেগম বলেন, 'বালি ও মাটি বিক্রি হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কারণ প্রশাসন এতে জড়িত। একবার নয়, একাধিকবার জানানো হয়েছে। কোনো লাভ হয়নি।'
উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, 'কিছু মাটি ও বালি স্থানীয় একটি মাদরাসা ও এতিমখানায় ব্যবহার করা হয়েছে। ফরিদের মাধ্যমে তা কেউ বিক্রি করেছে বলে আমার জানা নেই।'
উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এমরান উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে যারা বালি ও মাটি অবৈধভাবে বিক্রি করছে তারা ভূমিদস্যু। তাদের অন্য কোনো পরিচয় নেই। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।'
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বালু ও মাটি বিক্রেতা ফরিদ জানান, তিনি গরিব লোক। স্থানীয় মানুষ তাদের প্রয়োজনে তাকে বালু বা মাটির জন্য বললে তিনি ট্রলি দিয়ে ১০০/১৫০ ফুট বালি বা মাটি দিয়ে থাকেন। এতে তার সামান্য টাকা রোজগার হয়।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমী মান্নান বলেন, 'এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এইমাত্র জানলাম। আমি এখনই লোক পাঠাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এসএ/আরআর-০৭