মাখফিরা খানম ও মোস্তফা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের বৃত্তি বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
১১:৩৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
১১:৩৩ অপরাহ্ন



মাখফিরা খানম ও মোস্তফা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের বৃত্তি বিতরণ

মাখফিরা খানম ও মোস্তফা চৌধুরী ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাঘা ইউনিয়নের ১০টি বিদ্যালয়ের মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ও ৪টি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিতরণ করা হয়েছে। ১০টি বিদ্যালয়ের ৫০ জন গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আড়াই লাখ টাকা শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। 

আজ শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিলেট নগরের মীররবক্সটুলায় বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ চৌধুরী।

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে। এটা সম্ভব হলে জাতি হিসেবেও আমরা এগিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে জাতির পিতা প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারিকরণ করেন। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করেছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার হ্রাস করেছে।  

ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, করোনা মহামারির সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়েছে। এতে করে আবারও ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। তাদেরকে আবারও বিদ্যালয়মুখী করতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সবাই মিলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অনুদানের পৃষ্ঠপোষক ও মাখফিরা খানম ও মোস্তফা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী চৌধুরী।  

তিনি বলেন, অতীতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার মধ্যে বাঘা ইউনিয়ন অবহেলিত থাকায় অনেক পিছিয়ে ছিল। রাস্তাঘাট ছিল না। যাতায়াত করতে হতো নদী পারাপার হয়ে। সময়ের পরিবর্তনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও শিক্ষাক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিজের এলাকার শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বায়নের এই যুগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও আধুনিকায়নের প্রয়োজন রয়েছে। সমসাময়িক তথ্যগুলো শিক্ষকদের পেতে হলে কম্পিউটার ব্যবহারের বিকল্প নেই। টাইপিং আর প্রিন্টিং ছাড়াও অনেক কাজ রয়েছে কম্পিউটারে। সেগুলো শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

তথ্য ঘাটতির কারণে দেশের অনেক মেধাবী বিদেশে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রজন্মের বেশিরভাগের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও তারা অনেকক্ষেত্রে সঠিক তথ্য পাচ্ছে না। তথ্য ঘাটতির কারণে অনেক মেধাবীরা দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশে থাকলে তাদের আরও ভালো কাজ করতে পারত। বাঘা ইউনিয়নের কেউ যেন তথ্য ঘাটতির কারণে দেশের ভালো সুযোগ না হারায়। সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আগামীতে বাঘা থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব গড়ে তোলা যায়।

মাখফিরা খানম ও মোস্তফা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের শিক্ষা বৃত্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল ফজল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সিলেটের ব্যবসা এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন অনুষদের ডিন ড. তোফায়েল আহমদ, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর শাফি চৌধুরী এলিম ও বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম আহমদ চৌধুরী।

ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, মহামারিতে অনেক কিছুর ক্ষতি হয়েছে দেশে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন দেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যেখানে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কেউ কষেন না। নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যান তারা। কারণ মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে খ্যাত এই পেশায় দায়িত্ব অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। তাই দিনশেষে শত ঝড়-ঝঞ্ঝাট পেরিয়েও শিক্ষকরা মাথা উঁচু করেই চলতে পারেন।   

বক্তারা বলেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় শুধু পুথিগত বিদ্যা অর্জন করলেই হয় না। মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই মানসম্পন্ন শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হলে একজন শিক্ষককে হতে হবে সঠিক পরামর্শক ও দিক নির্দেশক। শিক্ষার্থীদের নিজেদের সেরা মেধাটা প্রকাশে যিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন, শিক্ষককে এমন একজন হতে হবে। এই ধাপ শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও এগিয়ে নিতে হবে। কারণ, গ্রামাঞ্চল এগিয়ে না গেলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।

বাঘা ইউনিয়ন কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বদরুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হাছনা নাজিম মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল হাসনাত ও লিপি একাডেমির প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। কোরআন তেলাওয়াত করেন দি মেমোরিয়াল ইসলামি একাডেমির প্রধান শিক্ষক হাফিজ ফয়জুর রহমান সুমন।    

উল্লেখ্য, মাখফিরা খানম ও মোস্তফা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের শিক্ষার্থীদের হয়ে বিদ্যালয় প্রধানরা শিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন। এসময় লিপি একাডেমি, হাছনা নাজিম মডেল স্কুল, চাইল্ড কেয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুল, মর্নিং স্টার একাডেমি, শাম্মী চাইল্ড একাডেমি, সোনাপুর মডেল একাডেমি, সানলাইট একাডেমি, হাজেরা প্রি-ক্যাডেট ইসলামি একাডেমি, কয়েছ আহমদ একাডেমি, দি মেমোরিয়াল ইসলামি একাডেমির প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের হয়ে বৃত্তির নগদ অর্থ গ্রহণ করেন।

আরসি-১৪