সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশও পানি উৎপাদন হচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১
০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন



সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশও পানি উৎপাদন হচ্ছে না

সিলেট নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের কুশিঘাটে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি পরিশোধন হবে। কিন্তু প্লান্টটি চালু করার পর থেকে দিনে মাত্র ৮০ লাখ লিটার উৎপাদন হচ্ছে। 

যান্ত্রিক ত্রুটি ও সুরমা নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে প্লান্টটি লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশও পানি পরিশোধন করতে পারছে না বলে জানা গেছে। যদিও, সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর দাবি করেছেন, যান্ত্রিক ত্রুটি নেই, শুষ্ক মৌসুমে কুশিঘাটে নদীতে বিশাল চর জাগায় প্লান্টটি পানি সংকটে পড়ে। 

তিনি বলেন, দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পাম্প চালানো হয়। এই সময়ে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি লিটার পানি পরিশোধন হয়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থাকায় এক লাখ লিটারের বেশি পানি পরিশোধন করা যায় বলে জানান তিনি। 

সিসিক কর্মকর্তার দাবি, উৎপাদিত পানিতে নগরের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। তাই, এর চেয়ে বেশি পানি উৎপাদন প্রয়োজন পড়ে না। 

যদিও, নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা ৮ কোটি লিটার। কুশিঘাটে পানি শোধনাগার প্রকল্পের পাশাপাশি নগরে আরও ৪০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে দিনে ৩ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হয়। সবমিলিয়ে নগরবাসীর চাহিদার অর্ধেকও পূরণ হয় না। 

২০০৯ সালে সিলেট-বরিশাল স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সিলেট নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। 

২০১৪ সালের ১৭ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হয়। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে পুরোদমে চালু হলেও যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পানি উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সিসিক সূত্র জানায়, কুশিঘাটে দুইটি পাম্প রয়েছে। উত্তর কুশিঘাটে স্থাপিত পাম্পের মাধ্যমে ২ কোটি লিটার এবং দক্ষিণ কুশিঘাটের পাম্প দিয়ে ৮০ লাখ লিটার সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু, দক্ষিণ সুরমার পাম্পটি প্রায় নিয়মিতই বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে এটি চালু করা হয়। 

সিসিক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, দক্ষিণ সুরমায় গ্রাহক কম থাকায় এটি চালু করার প্রয়োজন পড়ে না। যদিও, স্থাপিত এলাকায় সুরমা নদীতে বিশাল চর জেগে ওঠায় সেখানে পানি পাওয়ার কথা নয়। প্রকৌশলী আলী আকবর এ বিষয়টিও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে কুশিঘাটে সুরমা নদীতে পানি পাওয়া যায় না। এ জন্য নদী খনন একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা বিষয়টি নদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে দিয়েছি। 

সিলেট নগরে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে ৩ থেকে ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কোটি লিটার পানির ঘাটতি থাকছে। বর্তমানে নগরবাসীকে চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ পানি সরবরাহ করতে পারছে সিটি করপোরেশন। 

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৬ সালে সিলেট নগরের তোপখানায় একটি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়। ২০০২ সাল থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে নগরে সরবরাহ করা হয়ে আসছে। ৪২টি নলকূপের মধ্যে কখনো ৩৮টি কখনো ৪০টি চালু থাকে। দীর্ঘদিন হওয়ায় এসব নলকূপের কার্যক্ষমতা কমে গেছে। জরাজীর্ণ অনেক নলকূপে চাহিদামতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

এসএইচ/বিএ-০১