'কাম কাইজ সব বন্ধ, কী খাইয়া রোজা থাহুম?'

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


মে ০২, ২০২০
১২:৫৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ০৩, ২০২০
০১:১০ পূর্বাহ্ন



'কাম কাইজ সব বন্ধ, কী খাইয়া রোজা থাহুম?'

'বাবারে কী এহটা বেমার আইলো, আওয়ার ফর থাহি আমার কাম-কাইজ সব বন্ধ হইয়া গেছে গা। কী করাম, কই যামু, কে খাওয়াইবো। কাম-কাজ না করলে খামু কী? এহন আবার রোজার মাস আইয়া পড়ছে। জিনিসের যেই দাম, কী খাইয়া রোজা থাহুম?'

এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও গ্রামের মিলন বেগম। তিনি গ্রামে গোলাপীর মা নামে পরিচিত। মিলন বেগমের বয়স ৭০ বছর। তিনি ১০ থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্নজনের বাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই কাজ এখন বন্ধ।

মিলন বেগম বলেন, 'বইন ফুত এগু আছে, হে কাম-কাইজ করিয়া মাঝে মাঝে কিছু টাহা-পয়সা দিত। এহন হেরও কাম-কাইজ বন্ধ। ঘরের মাঝে খাওন নাই। হের লাইগা একদিন বার হইছিলাম কামে যাইতাম, পুলিশ দেইহা আর কামে যাই নাই। কওছাইন বাবা, কাম না করলে খাওন দিব কেডা? কিছু ডাইল-চাইল পাইছিলাম, এডি কয়দিন যাইবো? বেশি হইলে এহদিন কী দুই দিন যাইবো।'

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, মিলন বেগম প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫টি বাসায় কাজ করতেন। তার স্থায়ী কোনো বাসায় কাজ ছিল না। কোনা বাসা থেকে ১০ টাকা আবার কোনো বাসা থেকে ২০ টাকা পেতেন। আবার কেউ শুধু ভাত খাওয়াতো। এভাবেই ছুটা কাজে তার কোনোমতে দিন চলছিল। কিন্তু করোনার কারণে তিনি সেই কাজ করতে পারছেন না।

মিলন বেগম জানান, তিনি ছোট থাকতেই মা-বাবা দু'জনই মারা যান। অল্প বয়স থেকেই মানুষের বাড়িতে কাজ করেন তিনি। মিলন বেগমের এক মেয়ে। অভাবের কারণে তাকে পড়ালেখা করাতে পারেননি। এভাবেই কাজ করে কিছু টাকা-পয়সা জমিয়ে তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। দুই বছর আগে তার স্বামীও তাকে ছেড়ে চলে যান।

এই বয়সেও কাজ করে খাওয়া বিষয়ে তিনি জানান, মানুষের কাছে হাত পাততে তার লজ্জা করে। এ কারণে নিজে আয় করেন। কিন্তু করোনার কারণে তার কাজ বন্ধ। তাই রমজান মাসে কী খেয়ে রোজা রাখবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।  

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফজলু মিয়া বলেন, 'আমরা প্রতিদিনই ত্রাণ দিচ্ছি অনেককে। চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দ্রুত তার জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।'

 

এসএইচ/আরআর