বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ

আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী অনি


জুন ০২, ২০২৪
১০:৪৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৩, ২০২৪
০৮:২৫ অপরাহ্ন



বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ


মার্কিন মুল্লুকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৪। স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডার লড়াইয়ে মাঠে গড়াবে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।

ক্রিকেট দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত দল না হলেও মজার ব্যাপার হলো, গত শতকে অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে এ দুটি দেশ প্রথমবার মুখোমুখি হয়। সে বছরের ২৪ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। যাতে কানাডা ২৩ রানে জয়লাভ করে। 

ম্যাচটিকে উল্লেখ করা হয়েছিল ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা বনাম ব্রিটিশ সম্রাজ্য-কানাডা প্রদেশ। কমপক্ষে ২০ হাজার দর্শক ম্যানহাটনের সেন্ট জর্জেস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এ ম্যাচ উপভোগ করেন। পরের বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার কানাডায় ফিরতি ম্যাচ খেলতে যায়। পরবর্তিতে এ দুই দলের লড়াইয়ের নামকরণ করা হয় ‘অটি কাপ’ নামে। যদিও ১৯৯৪ সালে এসে আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় তা। পরে ২০১১ সালে আবার শুরু হয়। এই টুর্নামেন্টে একটি দু’দিনের ম্যাচ, একটি একদিনের এবং দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়ে থাকে। এ থেকে সহজে ধারণা করা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট ঐতিহ্য কিন্তু বেশ পুরনো। 

যাই হোক যদি বাংলাদেশের কথায় আসি তবে ক্রিকেট উন্মাদনায় মত্ত মানুষরা অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন আমাদের দলটি কেমন করবে? দলের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স খুব একটা আশার কথা বলছে না। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিজ হার তৈরি করেছে নানা শঙ্ক। দল নিয়ে হতাশা, কোচ নিয়ে নানা আলোচনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সাধারণ আড্ডা পর্যন্ত এখন সরগরম। ক্রিকেটাররা আশ্বস্ত করছেন, কিন্তু তাতে শঙ্কা কাটছে না। এমনিতেই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বলার মত উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই, আর টি-টোয়েন্টিতে সেটা আরও হতাশার। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটটা যেন বুঝে উঠতেই পারছে না আমাদের ক্রিকেটাররা। 

বিশ্বকাপের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশ পড়েছে ‘ডি’ গ্রুপে। যেখানে প্রতিপক্ষ নেপাল, নেদারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টি এমন একটি খেলা যাতে আসলে দুর্বল দলকেও সমীহ করতে হয়। একটি ভালো দিনে যেকোনো দেশ আরেকটি শক্তিশালী দেশকে হারিয়ে দিতে পারে আনায়সে। তবে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক মানসিকতা, আক্রমণাত্মক মনোভাব আর কঠোর অনুশীলন। আমাদের এসব গুণের ঘাটতি অনেক। 

প্রশ্ন হলো এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে? তা দেখতে হলে আগে আমাদের দেখতে হবে গ্রুপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের অতীতের পার্ফরম্যান্স কী বলে। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি ম্যাচ খেলেছিল ২০১৪ সালে। সে ম্যাচ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাই নেপালের সঙ্গে জয়ের হার ১০০ ভাগ। নেদারল্যান্ডের সঙ্গে খেলেছে চারটি ম্যাচ। যার মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতে। অর্থাৎ জয়ের হার ৭৫ শতাংশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া ৮ ম্যাচের সবকটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১৬টি ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র ৫টি ম্যাচ। এখানে জয়ের হার মাত্র ৩১ দশমিক ২৫ ভাগ। 

আমাদের প্রত্যাশার পারদ যতই চড়া থাকুক পরিসংখ্যান দেয় অন্য বার্তা। পরিসংখ্যান বলছে, নেপাল ও নেদারল্যান্ডের সঙ্গে দীর্ঘ বিরতিতে কিছু ম্যাচে সাফল্য থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকা বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের বলার মত কোনো সাফল্য নেই। সাম্প্রতিক ক্রিকেটে নেপাল বা নেদারল্যান্ডও খুব সহজ প্রতিপক্ষ হবে না, এই তো কয়েকদিন আগে নেদারল্যান্ড শক্তিশালী শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সে জানান দিয়েছে। সুপার এইটে সহজভাবে জায়গা করে নিতে হলে বাংলাদেশকে তিনটি ম্যাচে জিততে হবে। নেপাল, নেদারল্যান্ডকে হারাতে তো হবেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কা বা দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে এক দলকে অন্তত ধরাশায়ী করতে হবে। 

অপেক্ষাকৃত তরুণ বাংলাদেশ দল খানিকটা বাজে সময় পার করছে। অধিনায়ক শান্তর অভিজ্ঞতার অভাব এবং টপ অর্ডার ব্যাটারদের লাগাতার ব্যর্থতা কাজটা আরও কঠিন করে দিচ্ছে। তাই এ বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে হলে অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ ও সাকিবকে দলের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়া এবং অধিনায়ককে সহায়তা করা প্রয়োজন। দলের টপ অর্ডারকে পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে হবে এবং তার সঙ্গে সস্তায় উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের বোলিং ডিপার্টমেন্ট তুলনামূলকভাবে ভালো। তাই জয় পেতে হলে ব্যাটিংয়ের উন্নতি একান্ত প্রয়োজন। সব কিছু মিলে আশা যতই থাকুক বাস্তবতা আমাদের আশার লাগাম টানতেই বলছে।  

ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, খেলোয়াড় বা দর্শক সবার প্রত্যাশা থাকে জয়ের। এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের জয়গুলো বিচ্ছিন্ন। যার মূল কারণ ধারাবাহিকতার অভাব। জয় একটা অভ্যাসেরও বিষয়। পুরো দেশ তাই আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে সাকিবদের দিকে, চাইবে ৮ জুন প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ যেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করে তাদের এবারের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন।    

লেখক: সাবেক ক্রিকেটার, কোচ ও ক্রীড়া সংগঠক



এএফ/০৮