সিলেট মিরর ডেস্ক
ডিসেম্বর ০২, ২০২৩
০৩:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ০২, ২০২৩
০৩:৪৯ অপরাহ্ন
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনুভূত ভূমিকম্পগুলোর চারটিরই উৎসস্থল বাংলাদেশ। সবশেষ আজ শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে রিখটার স্কেলে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে সিলেটসহ সারাদেশ।
গত ১৪ আগস্টও অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ। সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলায়। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে সৃষ্ট এই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছিল ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং ভুটান ও মিয়ানমারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভূগর্ভের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। ফলে এর কম্পন বেশি অনুভূত হয়েছে।
বিষয়টিকে বড় ভূমিকম্পের লক্ষণ হিসেবে দেখছেন দেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্টলাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূতত্ত্বের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট বা চ্যুতি বলা হয়। ফল্টলাইনে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে যেকোনো সময় বড় ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। তিনি বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল।
বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে আন্তর্জাতিক ভূমিকম্প প্রকৌশল সংস্থার (আইএইই) উদ্যোগে নেওয়া ওয়ার্ল্ড সিসমিক সার্ভে ইনিশিয়েটিভের পরিচালক ড. আনসারী বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৮৬৯ থেকে শুরু করে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭-এর নিচের ভূমিকম্পগুলো ১৮৭০, ১৮৮৫, ১৯১৮ ও ১৯৩০ সালে হয়েছে। বলা হয়, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো দেড় শ বছর পরপর আসে। আর ৮ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো আসে তিন শ বছর পরপর। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আমাদের দেশে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে।’
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ইউএসজিএসের তথ্য বলছে, গত ৭-৮ মাসে বাংলাদেশ ও এর আশপাশে ভূমিকম্পের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। হয়তো এটা নির্দেশ করছে, আমাদের সামনে বড় ভূমিকম্প আসছে। কারণ, দেড় শ বছরের সাইকেলে আমরা পড়ে গেছি। ১৮৭০ সালের সঙ্গে যদি দেড় শ বছর যোগ করি তাহলে ২০২০। দেড় শ বছর মানে কিন্তু এটা নয়, ঠিক দেড় শ বছরেই ভূমিকম্প হবে। এটা ১৪০ বছরে হতে পারে। আবার ১৬০ বছরেও হতে পারে। তার মানে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া উপায় নাই।’
বড় ভূমিকম্পের আসার আগে ছোট ছোট টুকটাক ভূমিকম্প হয় উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অনেক সময় একশটা ছোট ভূমিকম্প হতে পারে। আবার বড় ভূমিকম্পের পরেও একশটা ছোট ভূমিকম্প হতে পারে।’
লক্ষ্মীপুর কিংবা সিলেটে ভূমিকম্প উৎপত্তির বিষয়টিকে খারাপ লক্ষণ হিসেবে দেখছেন কি না- এমন প্রশ্নে মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ। সিলেটের আশপাশে প্রায় তিনটি ফাটল বা চ্যুতি রয়েছে। যেখানে ৭.১, ৭.৫, ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। (এমন মাত্রার ভূমিকম্প) সিলেটে হোক আর ঢাকায় হোক, তা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেবে।’
সম্ভাব্য বড় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং ভূমিকম্পের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দেন এ বিশেষজ্ঞ।
করণীয় কি
বড় ভূমিকম্পে বিপর্যয় ঠেকাতে করণীয় বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রাতারাতি ভেঙে ফেলা যাবে না। তবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সেগুলো হয় ধ্বংস, নয় তো সংস্কার করতে হবে। উন্মুক্ত এলাকা রাখতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, সুয়ারেজ ইত্যাদির সরবরাহ লাইন এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ভূমিকম্প হলে এগুলো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা না হয়ে ওঠে। সচেতনতা নৃষ্টির পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
আরসি-০৩