সিলেট মিরর ডেস্ক
আগস্ট ০৪, ২০২৩
০৪:১৩ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২৩
০৪:১৩ অপরাহ্ন
দেশে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। একদিনে আরও ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৩ জনে। ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও ২০২২ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ ছিল। সেই বছরে দেশে সর্বোচ্চ মারা যায় ২৮১ জন। এটাই ছিল সর্বোচ্চ প্রাণহানি।
গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ২ হাজার ৫৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত ২৮৩ জনের মধ্যে নারী ১৫৭ জন এবং পুরুষ ১২৬ জন মারা গেছেন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৫৭ জন এবং রাজধানীতে ২২৬ জন।
গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৫৮৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ১০১ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৪৮৮জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ৫৮৯ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২১০ জনে।
ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৬৫০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪ হাজার ৫৬০ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৭১৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ ৩৮ হাজার ১১১ জন এবং নারী ২১ হাজার ৬০৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫০ হাজার ২২৩ জন।
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টের ৩ দিনে ৭ হাজার ৮৮৪ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩২ জনের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।
২০২২ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ ছিল। সে সময় আক্রান্ত ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং গেলো বছরে দেশে সর্বোচ্চ মারা যায় ২৮১ জন। দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ রোগী এবং মারা যান ১৮৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, দেশে ২০০০ সালে দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে আড়াই হাজার লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় এবং ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে ছয় হাজার রোগীর মধ্যে ৫৮ জন মারা যান। ২০০৩ সালে ৪৮৬ জনের মধ্যে ১০ জন, ২০০৪ সালে চার হাজারের মধ্যে ১৩ জন, ২০০৫ সালে এক হাজারের মধ্যে চার জন, ২০০৬ সালে দুই হাজারের মধ্যে মৃত্যু হয় ১১ জনের।
২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কেউ মারা যাননি। ২০১১ সালে দেড় হাজার রোগীর মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ৬৭১ জনের মধ্যে একজন, ২০১৩ সালে প্রায় দুই হাজারের মধ্যে দুইজন রোগী মারা যান। ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে কেউ মারা যাননি। ২০১৫ সালে তিন হাজারের মধ্যে ছয়জন, ২০১৬ সালে ছয় হাজারের মধ্যে ১৪ জন, ২০১৭ সালে তিন হাজারের মধ্যে আট জন, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জনের মধ্যে ১৮৯ জন মারা যান। ২০২০ সালে দেড় হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয় চারজনের। আর ২০২১ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় সাড়ে ২৮ হাজার, মারা যান ১০৫ জন।
ডেঙ্গু কীভাবে ছড়ায়?: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাথমিকভাবে সংক্রমিত স্ত্রী এডিস এজিপ্টি মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়। পুরুষ মশা সাধারণত ফুলের রেণু খায়, কিন্তু স্ত্রী মশার ডিম পাড়ার জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়।
ডেঙ্গুর জীবাণু আছে এমন কোন মানুষকে কামড়ানোর পর একটি মশা সংক্রমিত হয়। আট থেকে ১২ দিন পর ওই মশা আরেকজন মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে, এবং নিজের জীবনের শেষ দুই সপ্তাহের মধ্যে সে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে দিতে পারে।
মশার জীবনচক্র: এডিস এজিপ্টি মশার জীবনের চারটি ধাপ আছে - ডিম, লার্ভা বা শূককীট (জলাবদ্ধ পরিবেশে থাকে), পিউপা বা মূককীট এবং প্রাপ্তবয়স্ক মশা (ডিম পাড়ার জন্য যার রক্ত প্রয়োজন হয়)।
এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত সাত থেকে ১০দিন সময় লাগে, এরপরই সে বিভিন্ন রোগ, যেমন ডেঙ্গু এবং ইয়েলো ফিভার বা পীতজ্বর ছড়ানোর উপযোগী হয়।
প্লেটলেট বা প্লাটিলেট বাড়াতে পারে যেসব খাবার: ডেঙ্গু জ্বরে রক্তের শ্বেত কণিকা এবং রক্তের অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট, যা প্লাটিলেট নামেও পরিচিত, তা কমে যেতে পারে।
স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা দেড় থেকে চার লাখ পর্যন্ত থাকে, কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে সেটি ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।
এছাড়া ডেঙ্গু ভাইরাস বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জার ক্ষতি করে আর এই বোনম্যারো শরীরে প্লেটলেট তৈরি করে। এটি শরীরে অ্যান্টিবডি এবং প্লেটলেট তৈরি করে এমন রক্ত কণিকাকেও আক্রমণ করে।
এনএম-০১