জাহাঙ্গীরের কৌশলের কাছে আজমত উল্লার ভরাডুবি!

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২৭, ২০২৩
০৩:১৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৭, ২০২৩
০৪:৫০ অপরাহ্ন



জাহাঙ্গীরের কৌশলের কাছে আজমত উল্লার ভরাডুবি!


গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। তিনি সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মা। নিজে ভোটের লড়াইয়ে থাকতে না পেরে মাকে সামনে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান জাহাঙ্গীর আলম। সেই লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রবীণ নেতা আজমত উল্লা খানকে কুপোকাত করেছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক।   

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর এই ভরাডুবির পেছনে কী কারণ সেটা নিয়ে গাজীপুরসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যেই চলছে নানা বিচার-বিশ্লেষণ। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত জাহাঙ্গীর আলমের কৌশলের কাছেই ভরাডুবি হয়েছে আজমত উল্লার। জাহাঙ্গীর তার ব্যক্তি ইমেজ, কৌশলী প্রচারণা ও দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যবহার করেই অবিশ্বাস্য কাজটি করেছেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ভোটের দিন অনেক কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের কোনো এজেন্ট পর্যন্ত ছিল না। কেন্দ্রগুলোর আশপাশেও টেবিল ঘড়ির কোনো সমর্থককে দেখা যায়নি। তারপরও বিশাল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন অখ্যাত জায়েদা খাতুন।

অনেক প্রিজাইডিং অফিসারাও জানিয়েছিলেন জায়েদা খাতুনের কোনো এজেন্ট আসেনি। তবে কী কারণে তারা ভোটকেন্দ্রে আসেননি তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

 ভোটকেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা সরব। বেশিভাগ সমর্থকের গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্টের গলায়ও নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলানো ছিল। মূলত এটা ছিল জাহাঙ্গীর আলমের কৌশল।

এদিকে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, দেয়াল ঘড়ি প্রার্থীর এজেন্টের নামের তালিকায় স্বাক্ষর দিয়েছেন তারা। কিন্তু দায়িত্ব পালনে এজেন্টরা কক্ষে আসেননি।

শহীদ বৃত্তি স্মৃতি বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল কাদের ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, তার ভোটকেন্দ্রেও কোনো এজেন্ট দেননি জায়েদা খাতুন। তবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ও হাত পাখার এজেন্ট ছিল।

ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আশেক মোহাম্মদও জানিয়েছে তার কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের কোনো এজেন্ট ছিল না।

মেহেদী হাসান নামের স্থানীয় এক ভোটার বলেন, আমি চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রেই ভোট দিয়েছি। সেই কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের কোনো এজেন্ট বা সমর্থকও ছিল না। কেন্দ্রে যারা ছিলেন তারা সবাই নৌকা প্রতীকের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ছিলেন। তারা সবাই আজমত উল্লার সমর্থক দাবি করলেও ভোট দিয়েছেন ঘড়ি প্রতীকে। তা না হলে প্রতিটি কেন্দ্রে ঘড়ি প্রতীকের এত ভোট এলো কোথা থেকে?

এদিকে, নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের ব্যবহার করেই নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে- স্থানীয়দের এমন ধারণার সত্যতা স্বয়ং জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যেও পাওয়া গেছে। নিবার্চনী ফল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়া সাবেক মেয়র বলেন, নির্বাচনে নৌকার বিজয় হয়েছে, ব্যক্তি হেরেছে। কারও নাম উল্লেখ করতে চাই না, তবে নৌকার বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিতেছি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকেই আওয়ামী লীগ করি। আমি এখানকার আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ব্যক্তি। মানুষ আমার মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি ও আমার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে একটা সুন্দর শহর গড়ে তুলব।’

নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনে মাকে সহযোগিতা করবেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে একটি পরিকল্পিত নগরে পরিণত করব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমার মায়ের পাশে ছিলেন। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ভোট কেন্দ্রে আমার কোনো এজেন্ট ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার মাকে ভোট দিয়েছেন। তাদের ভোটেই আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছে।

উল্লেখ্য গাজিপুরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে রাতে শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে ভোটের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। তৃতীয় হওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট পেয়েছেন।

অপর মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট ও হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।


এসই/০৫