সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ১৪, ২০২৩
০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ১৪, ২০২৩
০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের উপকূলে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়েছে। শনিবার (১৪ মে) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলে মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন।
আজ শনিবার দিবাগত রাত ২টা ৩০মিনিটে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন।
এর আগে শনিবার রাত ৮টায় কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার সকাল ১০টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানবে। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ রাত ৩টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করবে।
তিনি জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত রিয়েল টাইম চিত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানান।
পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সর্বোচ্চ গতি অর্জন করবে (শনিবার) রাত ১২টার মধ্যে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে স্পষ্টত চোখ সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রচণ্ড ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়েছে ঠিক লন্ড্রি মেশিন যেমন করে শেষের কেয়ক মিনিট ঘুরতে থাকে কাপড় ধোয়ার সময় বন্ধ হওয়ার পূর্বে। ঠিক একই ঘটনা ঘটছে ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষেত্রেও। এমনকি মোখা এরই মধ্যে মিয়ানমারে আঘাত হানা শুরু করেছে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা অনেক দ্রুত উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ও রাত ১২টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘণ্টায় ১৯০ থেকে ২১০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত হানার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৭তম বিশেষ বার্তায় মনোয়ার হোসেন আরও জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার; যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
বিশেষ বার্তায় আরও বলা হয়, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলো আট নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হবে। এ ছাড়া উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হবে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
মোখার প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে। অতিভারী বৃষ্টির প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
এএফ/০৩