অগ্নিঝরা মার্চ - ৪

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ০৬, ২০২৩
০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০৬, ২০২৩
০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন



অগ্নিঝরা মার্চ - ৪
বিক্ষোভে উত্তাল গোটা দেশ


৪ মার্চ। অগ্নিঝরা মার্চের চতুর্থ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনটির ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালে বোঝা যায়, দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করার দৃপ্ত শপথে বাঙালি জাতি কী প্রস্তুতি নিয়েছিল।


পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) তখন বিদ্রোহ-বিক্ষোভে উত্তাল। বীর বাঙালি স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ছাত্র-শিল্পী-সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ বর্জন করে চলেছিল পাকিস্তানি প্রশাসনের সব আদেশ-নির্দেশ। অন্যদিকে সবকিছু চলছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মেনে।


বেতার-টেলিভিশন-চলচ্চিত্রা শিল্পীরা এক বিবৃবিতে ঘোষণা করেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত ‘বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেবেন না।


ওই বিবৃবিতে সই করেন, লায়লা আর্জুমান্দ বেগম, আফসারী খানম, আতীকুল ইসলাম, ফেরদৌসী রহমান, মুস্তফা জামান আব্বাসী, গোলাম মোস্তফা, হাসান ইমাম, জাহেদুর রহিম, আলতাফ মাহমুদ, ওয়াহিদুল হক, এএম হামিদসহ আরও কয়েকজন।


জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা বাংলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল চলে। প্রদেশের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।


হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহীদ হন। চট্টগ্রামে দুদিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।


পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন এ দিন তাদের এক জরুরি সভায় বাংলার জনগণের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানায়। ওই সভায় ৬ মার্চ সাংবাদিকদের মিছিল এবং বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনদিন কোনো জাতির মুক্তি আসেনি।


তিনি উপনিবেশবাদী শোষণ ও শাসন অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় বীর জাতিকে অভিনন্দন জানান।


৫ ও ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহবান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, যেসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মচারীরা এখনো বেতন পাননি, শুধু বেতন দেওয়ার জন্য সেসব অফিস আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।


এদিকে করাচি প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।


পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহবান করার দাবি জানান প্রেসিডেন্টের কাছে।


পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের নেত্রী কবি সুফিয়া কামাল ও মালেকা বেগম যৌথ বিবৃতিতে ৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক পৃথক বিবৃতিতে ঢাকার ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার গণবিরোধী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


এসই/০৪