চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম, সীমাহীন লোডশেডিং

শামীম আহমেদ, ধর্মপাশা


সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
০৯:৫৭ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
০৯:৫৭ অপরাহ্ন



চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম, সীমাহীন লোডশেডিং

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে পল্লী বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কারণে সেখানকার গ্রাহকেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ৬ মেগওয়াট থাকলেও সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ অবস্থায় দৈনিক গড়ে  ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা লোডশেডিং চলে। আর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে ৮ থেকে ১০ বার।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রচন্ড গরমে শিশু ও বয়স্ক মানুষকে চরম কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট থাকায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল নিম্ন আয়ের মানুষজনের চরম ক্ষতি হচ্ছে। 

নেত্রকোনার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে থাকা ধর্মপাশা ও মধ্যনগর অভিযোগ কেন্দ্র এবং বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে রয়েছে। বাকি একটি ইউনিয়ন সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে।  এখানকার ৯টি ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪৩ হাজার ৫০০ জন। গত এক সপ্তাহ ধরে এ উপজেলায় দিন-রাত মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ বার লোডশেডিং চলে। ফলে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া প্রচণ্ড গরমে শিশু ও বয়স্কদের চরম অস্বস্তির মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চার্জ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন।

ধর্মপাশা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র বাধন সরকার, ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী কুলসুমা আক্তার ও মধ্যনগর বিপি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফারজানা হক জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই লেখাপড়ার ১২টা বেজে গেছে। তার ওপর সপ্তাহখানেক ধরে সীমাহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে এ উপজেলাবাসী চরম অতিষ্ঠ। দৈনিক গড়ে ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। সন্ধ্যা ৭টার পর বিদ্যুৎ গেলে আসে রাত ১০টার দিকে। সপ্তাহখানেক ধরে এভাবে দিনে-রাতে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা চলে আসায় আমাদের লেখপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। 

ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের হলিদাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইকের চালক নূর মিয়া (৩৭) বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারেন্ট থাকে না। গাড়িতে ফুল চার্জ দিতে না পারায় আমাদের আয়-উপার্জন কমে গেছে। এই কারেন্টের সমস্যার সমাধান কবে হবে?

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ধর্মপাশা অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ জয়েন উদ্দিন বলেন, এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ৬ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ করা হয় মাত্র ২ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় গ্রাহকেরদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছেন।

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মোহনগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম মো. আবুল কালাম বলেন, ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি মেরামতজনিত কারণে এটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তাই আমাদেরকে এখন আশুগঞ্জ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে আমাদের সবরকম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মো. জাকির হোসেন বলেন, নানাবিধ কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।


এসএ/আরআর-০১