সিলেটে ১০ দিনের মধ্যে ১০ বার ভূমিকম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৯, ২০২১
০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৯, ২০২১
০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন



সিলেটে ১০ দিনের মধ্যে ১০ বার ভূমিকম্প
# আতঙ্কিত না হয়ে ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

সিলেটে ৮ দিন পর আবারও দুদফা ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে সিলেট। এ নিয়ে গত ১০ দিনের মধ্যে ১০ বার ভূমিকম্প হলো। এর মধ্যে ২৯মে সাত দফা, ৩০ মে এক দফা এবং গতকাল ২ দফা ভূমিকম্প হলো। এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় সিলেট জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৯ মিনিট ও ৬ টা ৩০ মিনিটে দুই দফা ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৮। উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ সুরমার জালালপুর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা জাগায়। তাই বলে শঙ্কিত হলে চলবে না। ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। 

ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম গতকাল সোমবার রাতে সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে তাতে দেখা যাচ্ছে সিলেটে ৬টা ২৯ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে ভূমিকম্প হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৮৮ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে। সে হিসেবে এটি সিলেট সেন্ট্রালেই ধরে নেওয়া যায়।’

দুইবার ভূকম্পনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একই ভূমিকম্পের প্রি ওয়েভ ও সেকেন্ডারি ওয়েভ থাকে। এর কারণে হয়ত একবার ভূমিকম্প হলেও আরেকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।’ তবে ভূমিকম্পগুলো খুব ‘মাইনর’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে গত সপ্তাহে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে সেগুলোরও মাত্রা কম ছিল। এবারের ভূকম্পনেরও মাত্রা খুব কম। ফলে শুধুমাত্র সিলেট নগরেই কম্পন অনুভূত হয়েছে।’

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে।’

এর আগে গত ২৯ মে সিলেটে পরপর সাত বার ভূকম্পন অনুভূত হয়। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওইদিন সিলেটে চার বার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ মাত্রার, সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ৪ দশমিক ১ মাত্রার, বেলা সাড়ে ১১টায় ২ দশমিক ৮ মাত্রার এবং সর্বশেষ দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাকিগুলো এত মৃদু মাত্রার ছিল যে মাত্রা মাপা যায়নি। তবে সবগুলোই সিলেট নগর এলাকায় অনুভূত হয়েছে। উপজেলাগুলোতে ভূকম্পন হয়নি। 

পরদিন ৩০ মে ভোরে সিলেট ফের ভুমিকম্প হয়। ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে নগরজুড়ে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ২ দশমিক ৮। এ সময় বেশির ভাগ মানুষ ঘুমে থাকায় এবং মাত্রা কম হওয়ায় টের পাননি। 

আট দফা ভূমিকম্পের পর আবারও ভূমিকম্পের আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছিল নগরবাসীর। এরই মধ্যে নগরের অনেক এলাকার মানুষ সাময়িকভাবে নগর ছেড়ে বাড়ি চলে যান। ৮ দিন পর গতকাল সোমবার আবারও দুই দফা ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। ভূমিকম্পের পর অনেককেই কর্মস্থল ও বাসা বাড়ি থেকে বের হয়ে খোলা স্থান ও সড়কে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ভূমিকম্প শেষ হলেও অনেককে দীর্ঘক্ষণ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে ভূমিকম্পে সিলেটের কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সিলেট ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কন্ট্রোল রুম। 

নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা সোবহান চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘দুই বারই ভূমিকম্পের মাত্রা অনেক বেশি মনে হয়েছে। একটি মার্কেটের তৃতীয় তলায় ছিলাম। দ্রুত তখন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসি। আজ আর কেনাকাটা করব না। বাসায় চলে যাচ্ছি।’ একই এলাকার শফিকুর রহমান বলেন, ‘খুব ঘনঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। খুব ভয়ে আছি কখন কী হয়।’

এদিকে, ভূমিকম্পে আতঙ্কিত না হয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক আর্থকোয়েক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা দেয়। এর আগে নেপালে যখন বড় ভূমিকম্প হয় তখনও এর আগে অনেকগুলো ছোট ভূমিকম্প হয়েছিল। তাই সিলেটেও বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এতে আতঙ্কিত হলে চলবে না। প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন আমরা জানি প্রতি বছর একটা সময় বন্যা আসে। আমরা সেরকম প্রস্তুতি রাখি। ঠিক তেমনি ভূমিকম্পের জন্যেও আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় করণীয় কী তা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে ব্যাপকভাবে। ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এছাড়া এখন থেকে সিটি করপোরেশনকে খুব যাচাই বাচাই করে বিল্ডিং করার অনুমতি দেওয়া উচিত। অনুমতি দিলেও তা সব সময় তদারকি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত বেশি করে কাজে লাগানো যেতে পারে।’

ছোট ছোট ভূমিকম্পের পর বড় ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুশতাক আহমদ বলেন, ‘এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। তবে ইতিহাস বলে ছোট ছোট ভূমিকম্প হলে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা থাকে। আবার অনেক সময় এসব ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণে বড় ভূমিকম্পের শক্তিও ক্ষয় হতে পারে। এই আশার জায়গাও আছে।’

গত ২৯ ও ৩০ মে ৫ দফা ভূমিকম্পের পর নড়েচড়ে বসে সিলেট সিটি করপোরেশন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণসহ জনসচেতনতা বাড়াতে জরুরিভিত্তিতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে নগর কর্তৃপক্ষের আহ্বানে বৈঠক করেন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। ১০ দিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৬ মার্কেট বন্ধ করে দেয় সিসিক।

এনএইচ/আরসি-০২