উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
মার্চ ৩০, ২০২১
১০:৪৮ অপরাহ্ন
আপডেট : মার্চ ৩০, ২০২১
১০:৪৯ অপরাহ্ন
চলতি খরার তীব্রতায় বোরো ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়েছে ফসলের ধানের চারাগুলো। গত রবিবার দুপুরে সরেজমিনে সিলেটের ওসমানীনগরের বিভিন্ন গ্রামের বোরো ফসলের মাঠ ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। পানির অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ভাড়েরা গ্রামের মাঠে একদল কৃষক যেন বৃষ্টির জন্যই প্রচন্ড রোদে আকাশের দিকে তাকিয়ে গাইছেন- 'আল্লা মেঘ দে পানি দে, ছায়া দে রে তুই ...'।
'অন্য বছর এমন সময়ে বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়ে যেত। কিন্তু এবার আকাশে মাঝে মাঝে মেঘের দেখা পাওয়া গেলেও বৃষ্টির খবর নেই। প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহে পুড়ছে হাওরের বুক, ধানী জমি।' কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার কালাসারা হাওর এলাকার কৃষক চান মিয়া।
আরেক কৃষক বুধু মিয়া জানান, চৈত্রে বৃষ্টি কম হলেও আগে কখনও প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ দেখা যায়নি। এ বছর এমনিতেই খরার টান বেশি। হাওরের কোথাও পানি নেই। হাওরপাড়ের দুই/একটি পুকুরে পানি থাকলেও সেচের জন্য তা যথেষ্ট নয়। এখন ধানের থোর গজানোর সময়। কিন্তু পানির অভাবে থোর অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির জন্য তারা দোয়া পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলায় ২৩টি হাওর, ৬টি নদী এবং ৪ হাজার ৮৩০টি পুকুরের হিসাব খাতা-কলমে থাকলেও অধিকাংশ নদী, হাওর ও পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির আধার নষ্ট হওয়ার পথে। ফলে শীত মৌসুমে দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট। চলতি বোরো মৌসুমে ওসমানীনগরে মোট ৭ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পানি না থাকায় চাষ হয়েছে ৭ হাজার ২২৫ হেক্টর জমি। তবে কৃষকরা বলছেন, এবার ধানগাছ যেভাবে বেড়ে উঠছিল, তাতে উৎপাদন আরও বেশি হতো। তাদের হিসাবে প্রতি একরে ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান উৎপাদিত হওয়ার কথা। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ধান গাছ ঝিমিয়ে পড়ছে। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হাজীপুরের মাঠে কথা হয় কৃষক গোলাম দস্তগীরের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন তিনি। জমি তৈরি, ধান গাছ রোপণ, আগাছা পরিষ্কার ও এক দফা সার-কীটনাশক দিয়েছেন। ধান গাছগুলোও তরতর করে বেড়ে উঠছিল। আশা ছিল ১ বিঘায় ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাবেন। কিন্তু পানির অভাবে হঠাৎ গাছগুলো থমকে গেছে। জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। এই সময়ে ধানের জমিতে হালকা বৃষ্টির পানি থাকে। কিন্তু এবার অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) দিয়ে পানি নিতে হচ্ছে। এতে তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এরপরও তিন-চারদিন পর পর পানি দিয়েও মাটি ভিজিয়ে রাখা যাচ্ছে না। দ্রুত মাটি ফেটে যাচ্ছে। আর এই ফাটা মাটিতে সেচের পানিরও বেশি প্রয়োজন হচ্ছে।
ভাড়েরা গ্রামের কৃষক আবরুছ আলী জানান, তিনি তুলনামূলক উঁচু ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। সেই জমি পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ধান গাছগুলো লাল হয়ে গেছে। এখন এই জমির ধান কীভাবে বাঁচাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুমন মিয়া বলেন, 'এবার ধানক্ষেত দেখে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলনের আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ফলন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে আবহাওয়া অফিসে সূত্রে জানা গেছে কয়েকদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অনেকটাই সম্ভব।'
তবে আশার কথা হলো, সোমবার (২৯ মার্চ) রাতে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি থাকতে পারে আরও ২/৩ দিন। যদি তাই হয়, তবে কৃষকদের মুখে হাসি ফিরবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে সিলেটে শিলাবৃষ্টির শঙ্কাও আছে। শিলাবৃষ্টি অবশ্য ফসলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। কৃষকরা তাই বর্তমানে অনিশ্চয়তার দোলাচলে আছেন।
ইউডি/আরআর-০১