সংক্রমণ বাড়লেও সিলেটে কমেছে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক


মার্চ ২৯, ২০২১
০৮:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৯, ২০২১
০৮:৪৫ অপরাহ্ন



সংক্রমণ বাড়লেও সিলেটে কমেছে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা

সিলেটে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অন্যদিকে কমছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা। প্রথম দিকে সিলেট বিভাগে টিকা গ্রহণে সাধারণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও গত ১ মাসে টিকা গ্রহণের সংখ্যা কমেছে ৫ গুণ। তবে ১ মাসে সংক্রমণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। 

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের মতো সিলেটেও শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। প্রথম ২ দিন টিকা গ্রহীতার সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও এরপর থেকেই বাড়তে থাকে এ সংখ্যা। এ সময় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার জন টিকা নেন। তবে গত এক মাসে তা কমেছে প্রায় ৫ গুণ। বর্তমানে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ প্রতিদিন টিকা নেন। তবে গত শনিবার বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৫ হাজার ২৩৩ জন। যা গত ২৭ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম দিকে ১২টি বুথে টিকা দেওয়া হলেও বর্তমানে ৬টি বুথে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলছে। এই ৬টি বুথে ৯০০ মানুষকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। প্রথম দিকে ১২টি বুথে প্রায় ২ হাজারের মতো মানুষকে টিকা দেওয়া হতো। তবে শনিবার এ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন মাত্র ২২৮ জন। 

টিকা গ্রহীতার সংখ্যা কমলেও সিলেটে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ২ সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে করোনা শনাক্ত হয় ৩৬৬ জনের। গড়ে প্রতিদিন শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ১২ জন। পরের ১ মাস শনাক্তের সংখ্যা বাড়ে দ্বিগুণের বেশি। এ সময় ৮৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। প্রতিদিন শনাক্ত হন গড়ে ২৭ জন। গত ১ সপ্তাহে (শনিবার সকাল পর্যন্ত) ৪২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন শনাক্ত ৬০ জন। 

তিনটি কারণে দেশে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যে পরিবর্তিত ধরন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে উষ্ণ আবহাওয়া। স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে অবাধ চলাফেরাও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখছে।

সংক্রমণ ঠেকাতে বেশি মানুষকে টিকা গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররক বলেন, ‘বিদেশযাত্রীদের মাধ্যমে ইউকে, স্প্যানিশসহ করোনার নতুন ধরন ছড়াচ্ছে। আর বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগ ইউকের স্ট্রেইনে (ধরন) আক্রান্ত হচ্ছেন। এর একমাত্র কারণ যুক্তরাজ্যফেরত অনেকেই করোনা নিয়ে দেশে আসছেন। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো যারা গতবছর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল তা এখন আর কার্যকর নয়। এ কারণেও সংক্রমণ বাড়ছে। তাই সংক্রমণ ঠেকাতে এখন বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এছাড়া অবশ্যই মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। ’

টিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ কম জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি। আমাদের বলে দেওয়া হয়েছে যারা টিকা নিতে ইচ্ছুক নয়, জোর করে যাতে তাদেরকে টিকা দেওয়া না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ডোজ দেওয়ার পর শরীরে ৬৫ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। দ্বিতীয় ডোজ নিলে ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তাই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হলে যখন মানুষজন দেখবে এটা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে তখন আগ্রহ বাড়বে। এছাড়া সরকার নির্দেশনা দিলে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকার প্রচারণা চালানোর জন্য প্রস্তুত আছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে গত শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৯৭ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৪৯২ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৫৭৫ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ৩৬ জন ও মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৯৯৪ জন রয়েছেন। 

শনিবার বিকেল পর্যন্ত বিভাগে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫০৬ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটে নিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৪ জন, সুনামগঞ্জে নিয়েছেন ৫৩ হাজার ৬১২ জন, হবিগঞ্জে ৪৮ হাজার ৫১৪ জন এবং মৌলভীবাজারে টিকা নিয়েছেন ৬১ হাজার ৫১৬ জন। শনিবার রাত পর্যন্ত বিভাগে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। 

এনএইচ/বিএ-০৩