শীতের শিম এবার মিলবে ১২ মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক


মার্চ ২২, ২০২১
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২২, ২০২১
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন



শীতের শিম এবার মিলবে ১২ মাস

শীতের সবজি হিসেবে সমাদৃত শিম। পুরো শীত জুড়ে শিম পাওয়া যায়। আমীষ সমৃদ্ধ শিমের ফুল ও ফল ধারণ ছোট দিনের উপর নির্ভরশীল। ফসলটি আলো সংবেদনশীল হওয়ায় এর প্রাপ্যতা প্রধানত শীতকালেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এখন থেকে শীত গেলেও শিমের যোগান বাজারে থাকবে সারা বছর। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক উদ্ভাবন করেছেন এমন জাতের শিমের বীজ, যা দ্বারা ১২ মাস শিম চাষ করা যাবে।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম উদ্ভাবিত সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২ নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে গ্রীষ্মকালীন বা ফটো-ইনসেনসিটিভ শিমের জাত উদ্ভাবনের লক্ষে ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২ নামে দুটি জাত কৃষক পর্যায়ে উৎপাদনের জন্য নিবন্ধন করা হয়। 

বীজ উদ্ভাবনে দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা গেছে, এ জাতীয় শিমের বীজ এপ্রিল মাসে বা শীতের শেষে বপন করলে জুন-জুলাই মাসে বা ৮০-৮৫ দিন পর ফল আহরণ করা যায়।

বীজটির উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, কম বৃষ্টিবহুল অঞ্চল ও উপক‚লবর্তী অঞ্চলে জাতগুলোর ভালো ফলাফল পাওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। গ্রীষ্মকালীন জাতগুলো বছরের যে সময়ই বপন করা হোক না কেন বীজ বপনের ৪৮ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই ফুল ফোটে এবং বীজ বপনের ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে শিম উত্তোলণ শুরু হয়। ৫ থেকে ৭ দিন পর পর কচি শিম মাঠ থেকে তোলা যায়।

তিনি জানান, বেলে দোঁয়াশ বা দোঁয়াশ মাটি গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ফসলটি দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। এটেল মাটিতে চাষ করলে পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। মূল জমী ৪ থেকে ৫ বার চাষ দিয়ে তৈরী করতে হয়। গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপশাম, বরিক এসিড সারগুলো মাটির উর্বরতাভেদে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। সিলেট অঞ্চলের মাটি অত্ম প্রকৃতির হওয়ার কারণে প্রতি শতক জমির জন্য ৪ কেজি ডলোচুন বীজ বপন ও চারা রোপনের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সেচ প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, গ্রীষ্মকালে শিম চাষ করলে প্রতি শতকে ৪৫-৫৫ কেজি (১২ থেকে ১৪টন/হেক্টর) কচি শিম ফলন পাওয়া যায়। শীতকালের শীমের তুলনায় ফলন কম হলেও উচ্চমূল্য নির্ধারণ করে কৃষকরা সহজেই লাভবান হতে পারেন।

সিকৃবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ পরিচালক খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেন, সিলেট অঞ্চলের কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করলে তাদেরকে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। প্রয়োজনে ০১৭২৪৭৫৮৮৮৫ ও ০১৭৬৬৮৫৮০০০ নম্বর দুটিতে ফোনকল করে কৃষকরা পরামর্শ পেতে পারেন ও বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। গ্রীষ্মকালে সবজি উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সিলেট অঞ্চলে শিমের বাণিজ্যিক চাষাবাদ করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে এ প্রযুক্তি সিলেটসহ আশেপাশের জেলা উপজেলাগুলোতে সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষকেরা ভালো ফলন ও বাজারমূল্য বিবেচনায় বিপুল উৎসাহ নিয়ে চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন।

বিএ-০৫