'অপকর্ম ঢাকতে' গোয়াইনঘাটের ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
০১:২০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
০১:২০ পূর্বাহ্ন



'অপকর্ম ঢাকতে' গোয়াইনঘাটের ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজের ও ছেলেদের অপকর্ম ঢাকতে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার ২ নম্বর পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার সাক্ষী মদরিছ আলী।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেটের গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় তিনি মামলার অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ আদালতে গোয়াইনঘাট থানাধীন জাফলং নয়াবস্তি গ্রামের মামলাবাজ ইনছান আলী গোয়াইনঘাট থানার ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও অভিযোগটি এখনও আমলে নেয়নি সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ আদালত। অভিযোগপত্রে ইনছান আলী অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে সাক্ষী হিসেবে আমাদের (মদরিছ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, ফয়জুল ইসলাম) নাম ব্যবহার করা হলেও আমরা অবগত নই। জাফলংয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী আলিম উদ্দিন ও তার পিতা ইনছান আলীর ওপর গোয়াইনঘাটের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সফিক মিয়া হত্যা মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সর্বমোট ৯টি মামলা বিদ্যমান আছে। এর মধ্যে দু'টি মামলায় সে পলাতক। এছাড়া ইনছান আলী এলাকার চিহ্নিত মামলাবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। আলিম উদ্দিন ১২ বছর বয়স থেকে তার বাবা ইনছান আলীর সঙ্গে বারকি শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে এখন সে কোটিপতি। তার এখন অঢেল সম্পত্তি। ভাইদের নামেও গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। আর এসব হয়েছে জাফলংয়ের কোয়ারির কারণে। জাফলং নয়াবস্তির যুবক সালামকে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় ইনছান আলীর পরিবার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আলিম উদ্দিনের পাথর লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় মামার বাজারে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সালেক নামের এক ট্রাকচালককে। আলিম উদ্দিন ছিলেন বারকি শ্রমিক। নয়াবস্তির বাসিন্দা হওয়ায় গ্রামের ওপারে জাফলং চা-বাগান এলাকার লুট করা পাথর সে নৌকা দিয়ে বহন করত। এরপর থেকে শুরু হয় তার রাজত্ব। কিছুদিনের মধ্যে আলিম উদ্দিনই হয়ে ওঠেন জাফলংয়ের মূল নিয়ন্ত্রক। এখন আলিম উদ্দিন ও তার ভাইয়েরা প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় করে নিজেদের গ্রামে ৩টি আলাদা বাড়ি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে আলিম উদ্দিনের বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। অপর দু’টি বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। নিজের নামে জাফলংয়ে অনেক জমি কিনেছেন আলিম উদ্দিন। তিনি গত বছর স্থানীয় লক্ষীপুর গোরস্থানের কাছে তোফাজ্জুলের কাছে থেকে ২৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। দলিলে এই জমির মূল্য ৭৫ লাখ টাকা দেখানো হলেও মালিককে দেওয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। পূর্বের মালিকপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, আলিমউদ্দিন নিজের নামেই ওই ভূমি ক্রয় করেন এবং টাকা পরিশোধ করেন। পরে তিনি জাফলং বল্লাঘাটের পুঞ্জিতে উডি খাসিয়ার কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে ৬১ শতক জমি ক্রয় করেছেন। এখনও দলিল রেজিস্ট্রি না হলেও স্ট্যাম্পে দস্তখত করে রেখেছেন। ক্রাশার মিল স্থাপন করতে এই জমি ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তানিশা স্টোর ক্রাশার মিল রয়েছে তার। প্রায় কোটি টাকার পাথর তার স্টোন ক্রাশার মিলে স্টক করা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মদরিছ আলী আরও বলেন, গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ যোগদানের পর জাফলং নয়াবস্তি এলাকার ইনছান আলী তার ছেলে আলিম উদ্দিনসহ তাদের পোষা বাহিনী নিয়ে জাফলং কোয়ারি এলাকা থেকে অবৈধভাবে বোমা মেশিন, বিলাই মেশিন ও সেইভ মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের জন্য ওসির সঙ্গে রফাদফা করতে আসেন। কিন্তু ওসি আব্দুল আহাদ এর বিরোধীতা ও তাদের সঙ্গে আঁতাত করতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে ইনছান আলী ও তার পোষা বাহিনী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যর্থ হয়। এছাড়া সম্প্রতি জাফলং এলাকার জনৈক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ও ছবি ভাইরালের বিষয়ে মামলা রুজু করা হলে ওসি আহাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আলীম উদ্দিনের পরিবার। পাশাপাশি পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সফিক মিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্যে মারামারি ও ওই ঘটনায় সফিক মিয়া হত্যায় আলিম উদ্দিনের পরিবারের ওপর মামলা গ্রহণ করা হলে আরও ক্ষেপে ওঠেন ইনছান আলী। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ ও শেষ পর্যন্ত উল্টো আদালতে ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মামলার ৭ নম্বর সাক্ষী মো. ফয়জুল ইসলাম ও ২৪ নম্বর সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল জলিল। মোবাইল ফোনে একাত্মতা পোষণ করেন ৫ নম্বর সাক্ষী রিয়াজ উদ্দিন, ১৪ নম্বর সাক্ষী বাহার উদ্দিন ও ২০ নম্বর সাক্ষী জাকির হোসেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ অন্যরা।

 

আরআর-০৩