টিকা গ্রহণে পিছিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
০৫:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
০৫:৩১ পূর্বাহ্ন



টিকা গ্রহণে পিছিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ
প্রচারের অভাবকেই দায়ী করছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা

করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাড়ছে হাসপাতালে টিকা প্রত্যাশ্যী মানুষের ভিড়ও। কিন্তু সেই তুলনায় পিছিয়ে আছেন নিম্ন আয়ের লোকজন। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন- প্রচার কম হওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ এখনও টিকা সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারেননি। ফলে তারা টিকার জন্য নিবন্ধনও করছেন না, হাসপাতালেও যাচ্ছেন না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, টিকা নিয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নগরে মাইকিং চলছে।

দেশব্যাপী গত ৭ ফেব্রয়ারি শুরু হয় টকা প্রদান কার্যক্রম। প্রথম দিন উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও পরের দিন থেকে বাড়তে থাকে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা। নগরের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে টিকা গ্রহণে আগ্রহী মানুষের। নানা বয়সী মানুষ টিকার জন্য হাসপাতালে গেলেও বয়স্কদেরই বেশি দেখা যাচ্ছে। 

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চল্লিশোর্ধ্ব যে কোনো ব্যক্তি নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। তবে করোনা টিকার বিষয়ে, কীভাবে নিবন্ধন করতে হয়, কোথায় টিকা দিতে হয় এসব কিছুই জানেন না নগরের বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। টিকা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলেও এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় তারা টিকা নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ করোনার টিকাকে শিশুদের বিভিন্ন টিকার মতোই দেখছেন। 

শনিবার নগরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। নগরের কাজীটুলা এলাকার চল্লিশোর্ধ্ব নারী হুসনেআরা বেগমকে করোনার টিকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘরের বাচ্চাদের কিছুদিন আগে টিকা দিয়েছি।’ করোনার টিকা আর বাচ্চাদের টিকা এক নয় বললে তিনি বলেন, ‘করোনার টিকা সম্পর্কে আমাদেরকে কেউ কিছু জানায়নি।’ 

একই এলাকার হাসিনা বেগম বলেন, ‘করোনার টিকা বিনামূল্যে নেওয়া যায় তা আমরা জানতাম না। কোথায় গিয়ে, কীভাবে টিকা পাব, কেউ কিছুই আমাদের বলেনি।’ টিকা গ্রহণের বিষয়ে কোনো মাইকিং বা প্রচার হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এ ধরনের কোনো মাইকিং হয়নি।’

আম্বারখানা বড়বাজার এলাকার সিদ্দিক মিয়া জানান, তিনিও করোনার টিকা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে লোকমুখে জানতে পেরেছেন করোনার টিকা দেওয়া শরীরের জন্য ভালো। তাই তিনি টিকা নিতে চান।

খাসদবির এলাকার ষাটোর্ধ্ব শমসের আলী সিলেট মিররকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে এলাকার নারীরা তাদের শিশুদের টিকা দিয়ে এসেছে। তবে করোনার টিকার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’ এলাকায় এ নিয়ে কোনো প্রচারও তার চোখে পড়েনি। টিকা গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জীবন বাচাতে হলে তো অবশ্যই টিকা নিতে হবে। কিন্তু টিকা নেওয়ার জন্য কীভাবে কী করতে হবে তা জানি না।’ 

প্রচারের অভাবেই নগরের নিম্ন আয়ের মানুষ টিকা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিমত সিলেটের নাগরিক সমাজের। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রচারের অভাবে নিম্ন আয়ের মানুষ টিকা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন না। নগরের জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় এই প্রচার খুব সহজেই করা যায়। প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নিবন্ধন বুথ তৈরি করা হলে সাধারণ জনগণ টিকা নিতে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদেরও দ্রুত টিকা প্রদান করতে পারলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লহ শহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারা সচেতন লোকজনই শুধুর টিকার বার্তা পাচ্ছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সরকারের বার্তা পৌঁছাচ্ছে না। তাই মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ভ্যাকসিনের বাার্তা পৌঁছাতে হবে।’ কাউন্সিলরদের কার্যালয়ে বিনামূল্যে নিবন্ধন বুথ স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেট মিররক বলেন, ‘নগরে টিকার বিষয়ে মাইকিং হচ্ছে। আর কাউন্সিলরদের কার্যালয়ে নিবন্ধন বুথ খোলার পরিকল্পনা আছে আমাদের। তবে যখন কমিউনিটি পর্যায়ে টিকাদান শুরু হয়ে যাবে তখন এসব বুথ চালু করা হবে।’ 

উল্লেখ্য, সিলেট জেলায় প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৮০০ ভায়াল টিকা এসেছে। এসব ভায়েলে ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজ টিকা রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য দেওয়া হয়েছে ২৮ হাজার ডোজ। জেলায় মোট ১৫৩টি টিকাদান বুথ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি সিটি করপোরেশনের এবং বাকি ১২৮টি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত¡াবধানে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ১২ উপজেলায় ২টি করে বুথ ও সিটি করপোরেশনে ১৩ টি বুথে এবং সিএমএইচের চারটি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন  ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। 

এনএইচ/বিএ-২০