নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
০১:০২ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আবারও ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার উপজেলার ভাটেরা এলাকায় তেলবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ৫ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এ নিয়ে গত দুই বছরে কুলাউড়া স্টেশন ও আশপাশ এলাকায় অন্তত ১২ বার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আমাদের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী তেলবাহী ট্রেন ভাটেরা এলাকা অতিক্রমকালে একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এরপর কুলাউড়া স্টেশন থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন সেখানে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালায় এবং বিকেল ৫টার পর রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুলাউড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মুহিব উদ্দিন আহমদ।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও ও বিয়ালিবাজারের মাঝামাঝি গুতিগাঁও এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
কুলাউড়ায় দুই বছরে ১২ দুর্ঘটনা : কুলাউড়া এলাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। গত দুই বছরে প্রায় ১০টির অধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে কুলাউড়া স্টেশন ও আশপাশ এলাকায়। তবু, দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
২০১৯ সালের ২৩ জুন কুলাউড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। রাতে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস কুলাউড়ার বরমচাল বড়ছড়া ব্রিজে উল্টে গেলে দুটি বগি ব্রিজটির নিচে ও আরও চারটি বগি সড়কের পাশে পড়ে। এতে চারজন নিহত ও তিন শতাধিক যাত্রী আহত হন।
২৮ জুন হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়ছড়া ব্রিজ ও লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস বড়ছড়া ব্রিজ এলাকায় আটকা পড়ে। পরে রেলওয়ের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাইনটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী করেন।
৭ জুলাই ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস কুলাউড়ার হাজিপুরের পলকি ও মনু ব্রিজের মাঝখানে একটি গরুকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলে গরুটি মারা যায়। এতে একটি হুইস পাইপ ভেঙ্গে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
১৯ জুলাই সকালে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের স্টেশন এলাকায় পৌঁছালে একটি বগির চাকা লাইচ্যুত হয়ে যায়। পরে দুর্ঘটনায় পড়া বগি রেখেই ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
২১ ঘণ্টার ব্যবধানে ২০ জুলাই সকালে কুলাউড়া আউটার সিগন্যালের (প্লাটফর্মের উত্তরপার্শ্বে) যে স্থানে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছিল একই স্থানে ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পড়ে।
৪ সেপ্টেম্বর ও ১৬ আগস্ট একই এলাকায় উপবন এক্সপ্রেস এবং ২৯ ডিসেম্বর কুলাউড়ার বরমচালে মালবাহী ট্রেন আবারও লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বরমচাল রেল স্টেশনের আউটার সিগন্যাল এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
করোনাকালে ২০২০ সালে প্রায় পাঁচমাস ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তবুও, কুলাউড়ায় ঘটে দুর্ঘটনা। ২৩ আগস্ট কুলাউড়ায় যাত্রীবাহী ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ১১ নভেম্বর ভাটেরায় সারবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে ১৮ ঘণ্টা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ৩০ নভেম্বর কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় একটি সারবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে যোগাযোগ বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা। তেলবাহী ট্রেন রেললাইনের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে।
সর্বশেষ গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি কুলাউড়ার তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতের ঘটনার পর ৫ ঘণ্টা রেলযোগাযোগ বন্ধ ছিল। একের পর এক দুর্ঘটনা ও অব্যবস্থাপনায় নিরাপদ রেল সড়কে আতঙ্ক বাড়ছে। যাত্রীসেবার মান নিয়েও আছে উঠেছে। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন লাইনচ্যুতির পেছনে নাজুক রেলপথ ও সেতুকে দায়ী করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ের বিধান অনুযায়ী মোটর-ট্রলিতে করে লাইন পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু কুলাউড়া স্টেশন থেকে সিলেট অভিমুখে বা শ্রীমঙ্গল স্টেশন অভিমুখে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা হয় না বললেই চলে। ফলে লোহা ব্যবসায়ীরা রেললাইনে স্পাইক খোলার বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে টাই প্লাট স্পাই, ক্লিপস ও ফিসপ্লেট খুলে নিয়ে যায়। খাঁটি লোহার এসব সরঞ্জামের চড়া দাম থাকায় প্রতিনিয়ত তা চুরি হচ্ছে। রেলওয়ের টহল ও মোটর-ট্রলি না থাকায় এবং কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে নির্বিঘ্নে এসব চুরি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সিলেট-আখাউড়া রেললাইন ডুয়েল গেজ করার জন্য ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল একনেকে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় এখনও এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।
এসএইচ/বিএ-২২