বেলাল আহমেদ
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
০৭:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
১০:০৫ পূর্বাহ্ন
বসন্ত কিংবা ঋতুরাজ বসন্ত। কুয়াশার আঁচল সরিয়ে আজ দুয়ারে এল বসন্ত। যেন নতুন হয়ে উঠেছে পুরোনো পৃথিবী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে, মধুর মলয়সমীরে মধুর মিলন রটাতে।’ আকাশ ভর্তি আগুন রঙা সোনালি রোদ। খুলে যাবে দুয়ার। বইবে ফাগুনের হাওয়া। সেই হাওয়ার স্পর্শে শীতের খোলস থেকে জেগে উঠেছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম। মৃদু-মন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যিই সে ঋতুরাজ বসন্ত। শিমুল-পলাশ-অশোকের শাখা ভরে উঠেছে রক্তিম ফুলের সম্ভারে। মাঝে বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় দুলে উঠছে সেই কুসুমশোভিত শাখা। ঝরে যাচ্ছে পুরোনো জীর্ণ-মলিন পাতা।
এবারের বসন্ত উদযাপন হবে একেবারেই ভিন্ন আবহে। করোনাভারাইসের প্রাদুর্ভাবের কারণে নগরে কোনো উৎসব নেই। এবারই প্রথম এমন উৎসবহীন বসন্ত দেখবেন নগরবাসী।
‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়....।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গান বসন্ত এলেই বাঙালির দেহ-মনে জাগায় নতুন শিহরণ। কোকিলের কুহু ডাক, প্রকৃতিতে জেগে ওঠা বিপুল প্রাণের স্পন্দন কুসুমশোভিত বহতা বাতাস নাগরিক হৃদয়ে গভীর আবেগ জাগিয়ে তোলে। শীতের হতশ্রী প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেয় লাবণ্য সুষমা। আর তাই বসন্ত ঋতুরাজ, বসন্ত প্রেমের ঋতু। নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছে বসন্ত।
নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। বসন্ত আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপর রঙ ছড়ায়। ১৯৫২ সালের ৮ই ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
বসন্তের দোলা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সব বাঙালির ঘরে ঘরে। তবে বাস্তবতার পাথরচাপা হৃদয়ে সবুজ বিবর্ণ হওয়া চোখে প্রকৃতি দেখার সুযোগ পান না নগরবাসী।
বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সর্বজনীন প্রাণের উৎসবের মাঝে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এই উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন শুরু হয়।
বিএ-০১