মাহবুবুর রশিদ, কানাইঘাট
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
১২:৩৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
১২:৩৫ পূর্বাহ্ন
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৬ মেয়র প্রার্থী
সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভা নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন বাকি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি এ পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে চতুর্মুখী ভোটের লড়াই হবে বলে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। দলের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক ভোটে মেয়র প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারন হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীদের প্রচারে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা পৌর এলাকা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে শেষপর্যায়ে পথসভা, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বত্র ভোট নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন এবং ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও সংরক্ষিত ৩টি ওয়ার্ড থেকে ৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কানাইঘাট পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১৯ হাজার ৪২৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৮৮০ জন এবং নারী ভোটার ৯৫৪৭ জন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শরীফুল হকের (ধানের শীষ) পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন (নারিকেল গাছ), অপর দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী সোহেল আমিন (জগ), কুয়েত প্রবাসী জামায়াত ঘরানার প্রার্থী কাওছার আহমদ (মোবাইল ফোন) ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফিজ নজির আহমদ (হাতপাখা) লড়ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী লুৎফুর রহমানের পক্ষে সিলেট জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কর্মীরা মরিয়া হয়ে প্রতিদিন প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শরীফুল হকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের নেতা-কর্মীদের প্রচার করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরাও প্রচারে পিছিয়ে নেই। তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সোহেল আমিন ও বর্তমান মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিনের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। নানা সমীকরণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়ে চমক দেখাতে পারেন। নির্বাচনে দলের বাইরের এলাকা ও আঞ্চলিকতার টান ভোটের মাঠে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সিলেটের নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সাল কাদির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম সকল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তারা ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী লুৎফুর রহমান। তিনি জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পৌরবাসী তাকে সমর্থন জানাচ্ছেন এবং তার প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করবেন।
বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শরীফুল হক জানান, তিনি যেদিকে যাচ্ছেন সেদিকেই ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি বিজয়ী হবেন।
অপরদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নিজাম উদ্দিন জানান, বিগত ৫ বছরে পৌরসভায় যে সমস্ত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে তা বিগত ২৫ বছরেও হয়নি। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী লুৎফুর রহমান মিথ্যাচার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছেন। পৌরসভার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সর্বস্তরের ভোটাররা তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিচ্ছেন। তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহেল আমিন জানান, পৌরসভার ভোটাররা এখন অনেক সচেতন। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে তারা নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ভোট দেবেন। পৌরসভার সর্বত্র তার প্রতীক জগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অপপ্রচার করে এলাকার মানুষকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি জনগণের বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কুয়েত প্রবাসী কাওছার আহমদ জানান, তার প্রতীক মোবাইল ফোনকে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে সবাই সমর্থন জানাচ্ছেন। বিজয়ের ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, 'পৌরসভার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে এবং নির্বাচন নিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা যাতে করে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড করতে না পারে, এজন্য পৌর এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।'
এমআর/আরআর-০৪