নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
০৬:৩০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন
ভয় কাটিয়ে টিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। টিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে তাই টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। সোমবার সিলেট বিভাগে টিকা নিয়েছেন প্রথম দিনের প্রায় দ্বিগুণ মানুষ। দ্বিতীয় দিনে টিকা গ্রহণকারী ৩ হাজার ৯৫৪ জনের মধ্যে ২ হাজার ৮৮৫ জন পুরুষ। দ্বিতীয় দিনে ১ হাজার ৬৯ জন নারী টিকা নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম দিন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে ভয় কেটেছে। তাই টিকার জন্য নিবন্ধন এবং টিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৩৯৬ জন টিকা নিয়েছিলেন।
সিলেট : সিলেট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল জেলার ৪১টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৪৮ জন টিকা নিয়েছেন। যা প্রথম দিনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। টিকা গ্রহণকারীরের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ২৫৮ জন এবং নারী ৪৯০ জন। জেলার ৪১টি বুথের মধ্যে নগরের দুইটি কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ২১৯ জন। এদের মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৬৯ জন এবং পুলিশ হাসপাতালে ১৫০ জন টিকা নিয়েছেন। ওসমানী হাসপাতলে টিকা নেওয়াদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৭১৩ জন এবং নারী ছিলেন ৩৫৬ জন। আর পুলিশ হাসপাতালে ১১৪ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী টিকা নেন। এর আগে প্রথম দিন রবিবার জেলায় ৯৪৮ জন টিকা নিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪১ বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নগরে ছিল ১৩টি বুথ। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২টি বুথ এবং বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ১টি বুথ রয়েছে। আর বাকি ১২ উপজেলায় ২টি করে ২৪টি এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চারটি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথে ২ জন টিকাদান কর্মী এবং ৪ জন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। নগরে একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল সিলেট মিররকে বলেন, ‘সোমবার জেলায় ১ হাজার ৭৪৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। জেলার ৪১ কেন্দ্রে এসব টিকা দেওয়া হয়।’
সোমবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মীর মাহবুবুর রহমান, করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র, সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদসহ চিকিৎসক-নার্স, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ নানা শ্রেণির মানুষ টিকা গ্রহণ করেন। সরেজমিন হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রথম দিনের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ টিকা নিতে এসেছেন। টিকা নিতে আসাদের মধ্যে গতদিনের মতো সোমবারও বয়স্ক ও বৃদ্ধদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।
হাসপাতালের ১২ নম্বর টিকাদান বুথে রবিবার পুরো দিনে টিকা নিয়েছিলেন ২০ জন। তবে গতকাল সোমবার একটা পর্যন্ত এই বুথে টিকা নেন ৭৭ জন। ১১ নম্বর বুথের অবস্থাও ছিল প্রায় একই। রবিবার সারাদিনে এই বুথে টিকা নিয়েছিলেন ২৯ জন। আর সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত টিকা নেন ৭৮ জন।
১২ নম্বর বুথের টিকাদান কর্মী রিক্তা রানী দাস সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রথম দিনের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ মানুষ এসে টিকা নিচ্ছেন। বেশি মানুষকে সেবা দিতে পেরে আমাদেরও আনন্দ লাগছে।’ একই অভিমত ব্যক্ত করেন হাসপাতালের ৮ নম্বর বুথের স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান আনিকা নাসরিন।
এদিকে, টিকা নিয়ে খুশি সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। টিকা নেওয়ার পর স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মীর মাহবুবুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘টিকা নিতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। সবাইকে বলব দ্রুত টিকা নিন।’
সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২০ মিনিট হলো টিকা নিয়েছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নিবন্ধন করতেও কোনো সমস্যা হয়নি।’
হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের সার্বিক অবস্থা সন্তুষ্টজনক বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘টিকা দিতে এসে কোনো ধরনের সমস্যা বা ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। খুব সহজেই টিকা দিতে পেরেছি। টিকাদান কেন্দ্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো।’
এ দিনও বয়স্কদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই স্বজনের হাত ধরে আসেন টিকা নিতে। কেউবা স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ারে এসেছেন টিকা দিতে। ৭০ বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য আসেন নগরের বালুচর এলাকা থেকে। পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে শুয়ে তিনি বলেন,‘টিকা নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবাইকে বলব করোনা থেকে বাঁচতে দ্রুত টিকা নিন।’
এদিকে, সোমবার টিকা গ্রহণকারীদের কারো শরীরে কোনো প¦ার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি বলে জানিয়েছেন ওসমানীর পর্যবেক্ষণ রুমের দায়িত্বে থাকা এইএফআই কমিটির ফোকাল পারসন ডা. আবু নাঈম মোহাম্মদ। বেলা দুইটার দিকে তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে কোনো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া দেখতে পাইনি। যেখানে টিকা নিয়েছেন সেখানে সামান্য জ্বালাপোড়া হতে পারে। সেটা আসলে প্বার্শ প্রতিক্রিয়া না।’
নগরের দুইটি কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। দ্বিতীয় দিনে টিকার কার্যক্রম নিয়ে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ নগরে টিকা নিয়েছেন। প্রথম দিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নেওয়ায় জনগণের ভীতি কমেছে। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আমি নগরবাসীকে আহ্বান জানাব সবাই যেন টিকা নেন।’
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারেও টিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। দ্বিতীয় দিনে জেলার সকল উপজেলা মিলিয়ে মোট টিকা নিয়েছেন ৮৯৪ জন। প্রথম দিন সব উপজেলায় টিকা নিয়েছিলেন মাত্র ৪২৭ জন।
প্রথমদিন টিকা গ্রহণের পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেওয়ায় মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দিনে টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৬০৩ জন ও নারী ২৯১ জন।
উপজেলা পর্যায়ে মৌলভীবাজার সদরে টিকা নিয়েছেন ২৬৬ জন, রাজনগরে ৭০ জন, কুলাউড়ায় ৮০ জন, বড়লেখায় ১৯০ জন, কমলগঞ্জে ৪২ জন, শ্রীমঙ্গলে ১৭১ ও জুড়ীতে ৭৫ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ।
সুনামগঞ্জ : সোমবার সুনামগঞ্জেও বেড়েছে টিকাগ্রহণকারীর সংখ্যা। এ দিন টিকা নিয়েছেন ৭৯১ জন। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৪৭ জন পুরুষ ও ১৪৪ জন নারী। এর আগে রবিবার জেলায় ৬৭৯ জন টিকা নেন। সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন জানান, প্রথম দিন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নেওয়ায় মানুষের মধ্যে ভয় কমেছে। তাই সোমবার বেশি মানুষ টিকা দিয়েছেন।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে দ্বিতীয় দিন টিকা গ্রহণ করছেন ৫২১ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৩৭৭ এবং নারী ১৪৪ জন। প্রথম দিন এ জেলায় টিকা নিয়েছিলেন ৩৪২ জন। হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন মুখলিছুর রহমান উজ্জ্বল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এনএইচ/আরসি-০৫