গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১
০২:৪৬ পূর্বাহ্ন
মো. রুহেল আহমদ
সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী হয়ে পরাজিত হওয়া মো. রুহেল আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ নেতা-কর্মীর অসহযোগিতা ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাজ করায় গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার পরাজয় হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। পৌরসভার ফুলবাড়িস্থ তার বাড়িতে ওই প্রেসবিফ্রিং অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকাকে গোলাপগঞ্জে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এর পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। তারা নৌকার পক্ষে কাজ করা তো দূরের কথা, নৌকা আটকানোর মিশনে নেমেছিলেন। প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হয়েছিল বলে যারা এখন মায়াকান্না করছেন, তারা নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখেননি। তারা সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হলে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বা ধানের শীষের প্রতি সমর্থন জানাতেন না। নেতাদের অনেকে নৌকার সভায়, গণসংযোগে এসে শুধু ফটোসেশন করেছেন এবং পরে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। দলের কয়েকজন নেতা ছাড়া নির্বাচনে তিনি কারও সহযোগিতা পাননি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিগত নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিলে আমি দলের কাছে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করি।
মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনি কোনো তদবির করেননি উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী সত্য কথা না বলে জনসাধারণকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করেছেন। অথচ তারা সুস্পষ্ট কারণেই মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাকে দল মনোনয়ন দেয়।
তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় নৌকার বিজয় হতো। কিন্তু বিগত সময়ে তারা আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিয়ে ৩০ তারিখের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের দুইদিন আগে আমার এলাকায় পুলিশ পরিকল্পিতভাবে বাসা-বাড়িতে হয়রানি করেছিল, যার কারণে নির্বাচনে আমার ফলাফলের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে আমাকে নানা হয়রারি করা হলেও আমি থানা কিংবা নির্বাচন কমিশনে কোনো অভিযোগ করিনি। কিন্তু অবাক হয়েছি, আমার এলাকায় নির্বাচনের আগের রাতে কাদের ইশারায় প্রশাসন এমন করল?
মো. রুহেল আহমদ বলেন, আমি পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে রাজনীতি করেছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাব। সর্বোপরি এসব বহুমূখী ষড়যন্ত্রের মধ্যেও যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা ও পৌরসভার সকল নাগরিকদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিগগির তিনি পৌরসভা নির্বাচনে দলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌর আওয়ামী লীগকে গোছানো বা পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতিকে বার বার তাগাদা দিয়েছিলাম। তিনি এতে কর্ণপাত করেননি। যা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অবহিত আছেন। আগামীতে পৌর আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সত্যিকারের কর্মীদের স্থান দিয়ে গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি শক্তিশালী সংগঠন উপহার দিতে চাই।
তিনি নবনির্বাচিত পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানান এবং একটি আধুনিক উন্নত পৌরসভা গড়ে তুলতে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
এফএম/আরআর-০৬