নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৮, ২০২১
০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২৮, ২০২১
০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
নয়াসড়ক জামে মসজিদের মোতোয়াল্লি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই গ্রুপের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মীরবক্সটুলাস্থ জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া নয়াসড়ক মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নয়াসড়ক জামে মসজিদের প্রয়াত মোতওয়াল্লি আব্দুল মালিক রাজার মৃত্যুর পর মসজিদের মোতওয়াল্লি নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এক পক্ষ মোতওয়াল্লি হিসেবে আব্দুস সালামের নাম প্রস্তাব করেন। অন্যদিকে আব্দুল মালিক রাজার ছোট ভাই আব্দুল হক রানার নাম প্রস্তাব করেন অন্যপক্ষ।
বুধবার সকালে বাংলাদেশ ওয়াক্ফের একটি দল বিষয়টি তদন্ত করতে আসে। উভয় পক্ষকে নিয়ে মীরবক্সটুলাস্থ জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া নয়াসড়ক মাদরাসায় সভা শুরু হয়। সভার এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে গড়ায়। এ সময় ৪ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুলিশের একটি গাড়ি সেখানে অবস্থান করছিল।
এদিকে, এক পক্ষের দাবি সভা চলাকালে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আব্দুস সালামের ছেলে নাজীব অন্যপক্ষের মোতওায়াল্লি হিসেবে প্রস্তাবিত আব্দুল হক রানার বুকে ছুরিকাঘাত করেন। তবে আব্দুস সালাম বিষয়টিকে অস্বীকার করে জানান, তার ছেলে নাজীবকেই ওই পক্ষের লোকজন রড দিয়ে আঘাত করে।
এ বিষয়ে আব্দুল হক রানার ভাই মিলাদ আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘মোতওয়াল্লি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনতে ওয়াক্ফের কর্মকর্তারা আসেন। শান্তিপূর্ণভাবে সভা চলছিল। তবে এক পর্যায়ে আমাদের ভাতিজা শামিম আহমদের সঙ্গে আব্দুস সালামের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। এক সময় সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় আব্দুস সালামের ছেলে নাজীব সালাম প্রথমেই আমার ভাই আব্দুল হক রানাকে ছুরিকাঘাত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জানু বিবি ওয়াক্ফ স্টেটের দলিল মোতাবেক যে চার পক্ষ উত্তরাধিকার, সেই উত্তরাধিকার সূত্রে আমার বড় ভাই আব্দুল মালিক রাজা মোতওয়াল্লি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন উনার ছোট ভাই আব্দুল হক রানার নাম আমরা প্রস্তাব করেছি। আর অন্য একটি পক্ষ নিজেদের উত্তরাধিকার হিসেবে দাবি করছে। তবে আমাদের কাছে দলিল রয়েছে।’ হামলার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে আব্দুস সালাম হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘সভা চলাকালে ওই পক্ষের শামিম আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এ সময় আমার ছেলেসহ অন্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আব্দুল হক রানার লোকজনই আমার ছেলে নাজীবের উপর রড দিয়ে হামলা করে। এ ঘটনায় একমাত্র নাজীবই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া আমার ভাইও আহত হয়েছেন। তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছেন। শামিম গালিগালাজ না করলে হয়ত আজ এই ঘটনা ঘটত না।’
তিনি বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে আমার দাদা ছিলেন নয়াসড়ক মসজিদের মোতওয়াল্লি। আমার চাচাও দীর্ঘদিন মসজিদের মোতওয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের কাছে সব ডকুমেন্টস ছিল।’ স্থানীয় কাউন্সিলরসহ অন্যরা সমঝোতার আশ^াস দেওয়ায় মামলা করছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমঝোতায় বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে আমরা মামলা দায়ের করব।’
হাতাহাতির বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘মসজিদের মোতওয়াল্লি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ ছিল। এ বিষয়ে বুধবার সকালে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এক পর্যায়ে দুই পক্ষের হাতাহাতি শুরু হয়। এতে ৪ জন আহত হয়েছেন। তারা ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিবেশ শান্ত করে।’ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মাদরাসা কমিটির সদস্য মো. একরামুল আজিজ বলেন, ‘নয়াসড়ক মসজিদের মোতওয়াল্লি নিয়ে বিরোধ। এ বিষয়ে মাদরাসায় একটি সভা হয়। যেহেতু মসজিদের কাজ চলছে সেজন্য মাদরাসায় তারা সভা করতে চেয়েছিলেন। আমরা তাদের অনুমতি দিয়েছিলাম।’
এনএইচ/আরসি-০৮