সিলেট মিরর ডেস্ক
জানুয়ারি ২২, ২০২১
০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২২, ২০২১
০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নেতা শ্যামাচরণ বর্মণকে হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন সিলেটের নাগরিকরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত ‘জলমহালে মগের মুল্লুকে সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন’-এ বক্তারা এ দাবি জানান।
নাগরিকবন্ধনে উপস্থিত হয়েছে নিহত শ্যামাচরণ বর্মণের ছেলে চন্দন বর্মণ ও ভাই মনীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ সন্ত্রাস কবলিত হাওরপাড়ের চিত্র তুলে ধরেন।
মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ বর্মণ রানা-এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিলেট মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, সম্মিলিত নাট্যপরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, সাংস্কৃতিক সংগঠক এনামুল মুনির, গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু প্রমুখ। এতে আরও অংশগ্রহণ করেন চিত্রশিল্পী সত্যজিত রাজন, মেঠোসুর সম্পাদক বিমান তালুকদার, দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক রাজিব রাসেল ও নিরঞ্জন পাল, হাওরপারের ধামাইল-এর সহ-সভাপতি সজল কান্তি সরকার, সুনামগঞ্জের সাবেক ছাত্রনেতা পরিতোষ ঘোষ চৌধুরী, ছাত্রমৈত্রী সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মাসুদ রানা চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সংগঠক রুবেল মিয়া প্রমুখ।
কর্মসূচি পালনকালে বক্তারা সুনামগঞ্জে-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাইদের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। বক্তারা বলেন, ‘সাংসদ রতন হাওর অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এখানকার অতীত গৌরবময় রাজনীতির মুখে চুনকালী দিয়ে লুটপাট, চাঁদাবাজি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মাদক ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণ, জলমহাল ও বালুমহাল থেকে অর্থ আদায়ে এসে ঠেকেছে সুনামগঞ্জের রাজনীতি। একজন সাংসদের বিরুদ্ধে বাড়ি দখল, জায়গা দখলের অভিযোগতো আছেই, মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিবাদী দলীয় নেতাকর্মীদের হেনস্থা করার অসংখ্য অভিযোগও আছে। নিজের ভাইকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করানোসহ মধ্যনগর-ধর্মপাশা এলাকাতে পরিবারতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। তাই সেখানকার প্রশাসন সাংসদের বিপক্ষে অবস্থান নিইয়ে টিকে থাকতে পারে না। সেখানে তার কথাই আইন। তার অবৈধ অর্থের কাছে আইনের শাসন আজ পদদলিত।’
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন-এর সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম ধর্মপাশার ঘটনায় সিলেটে আয়োজিত এই সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন কর্মসূচি পালনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন প্রথাগত কোনো সংগঠন নয়, স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদ জানানোর একটি নাগরিক মোর্চা। আমরা তখনই সংক্ষুব্দ হই, যখন অত্যাচার, নিপীড়ন অব্যাহতভাবে চলে, কিন্তু কোনো প্রতিবাদ দেখা যায় না। ২০০৪ সালে যখন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে তটস্থ ছিল সিলেট, তখনই প্রথম সংক্ষুব্দ হয়ে আমরা রাজপথে দাঁড়িয়েছিলাম। সেই থেকে গত দেড় দশক ধরে আমরা অর্ধশত পৃথক কর্মসূচি পালন করেছি। সন্ত্রস্ত মানুষকে সাহস জুগিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। চেষ্টা করেছি সমাজে প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত রাখতে।’
তিনি কর্মসুচির সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘ধর্মপাশায় সুনাই নদীর তীরে সেদিন যা হয়েছে, তা মানবতা বিরোধী অপরাধ। রাতের আঁধারে একটি জনগোষ্ঠির জীবন জীবিকার উৎসে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও জবাই করে একজন বৃদ্ধলোককে হত্যা করার পরেও স্থানীয় প্রশাসনের নির্লজ্জ আচরণে আমরা সংক্ষুব্ধ। হাওর অঞ্চলে সাংসদ রতন ও তার লোকদের নেতৃত্বে যা চলছে তা পাকহানাদার বাহিনীর সন্ত্রাসের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
সমবায় সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি রাতে সুনই জলমহালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের আপন তিন ভাইয়ের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এ সময় জলমহালে মৎস্যজীবীদের খলা (জেলেদের থাকার জন্য তৈরি স্থাপনা) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ৬৫ বছর বয়সের শ্যামাচরণ বর্মণের গলা কেটে হত্যা করা হয়। সাংসদ বাহিনীর হামলায় সমিতির কমপক্ষে ২০ জন সদস্য আহত হন।’
সভাপতির বক্তব্যে ভবতোষ বর্মণ রানা বলেন, ‘ক্ষমতায় যখন অসাম্প্রদায়িক সরকার ঠিক সেই সময়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নারকীয় অত্যাচার নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেই এখানে পবিত্র শহিদ মিনারের সম্মুখে দাঁড়িয়েছি। দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে যার লাগামহীন অনিয়ম দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ রয়েছে সেই মোয়াজ্জেম হোসেন রতন কীভাবে এই সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের ভারতে পাঠানোর মত ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলেন। রতনের ভিডিও আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। নিজের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে জলমহালে হামলা করে মানুষ হত্যার পর সে আবার সমবেদনা জানাতে ওসি সাহেবকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি।’
আরসি-০৪