ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ
জানুয়ারি ২২, ২০২১
০২:৫৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২২, ২০২১
০২:৫৪ পূর্বাহ্ন
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- সরকারের এমন উদ্যোগে সারাদেশের ন্যায় সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ঘর পাচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীন ২শ পরিবার। আধাপাকা টিনশেড প্রতিটি ঘরে থাকছে দু'টি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, টয়লেট এবং সামনে খোলা বারান্দা। ইতোমধ্যে ৭৬টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী মার্চের মধ্যে সবগুলো ঘর নির্মাণ করার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির।
জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি ঘরহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে ঘরহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে গোলাপগঞ্জে ২শটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার সদর ইউনিয়নে গোয়াসপুর ও চৌঘরীতে ১৪টি, লক্ষীপাশা ইউনিয়নে ৭টি এবং ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফতেপুর এলাকায় ৬০টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। অবশিষ্ট ঘর নির্মাণের জন্য খাস জমি খোঁজা হচ্ছে। জমি চিহ্নিত করার কাজ শেষ হলেই পর্যায়ক্রমে সবগুলো গৃহনির্মাণের কাজ শুরু হবে। কেউ চাইলে জমি দান করে ঘর নির্মাণে সহযোগিতা করতে পারেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নে ৬০টি, সদর ইউনিয়নে ১৪টি ও লক্ষীপাশা ইউনিয়নে ২টি ঘরের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ঘরগুলোর কাজ আগামী মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নিয়ে ৪ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। ২২ ফুট বাই ২০ ফুট প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে গোলাপগঞ্জে ঘর নির্মাণ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৪ সদস্যের কমিটি করা হলেও অর্থ ব্যয়ের পুরো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।
এদিকে নতুন পাকা ঘর তৈরি হচ্ছে দেখে হাসি ফুটেছে ঘরহীন পরিবারগুলোর মানুষের মুখে। এমন একজন উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের মিনা বেগম। নিজের বাড়ি না থাকায় তিনি অন্যের জায়গায় গত কয়েকবছর থেকে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে পরিবার নিয়ে কোনোরকমে বসবাস করছেন। ঘর পেতে যাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে পরিবার নিয়ে অন্যের জায়গায় অনেক কষ্টে থেকেছি। আর কষ্ট করতে হবে না।' এ সময় মিনা বেগমের চোখে-মুখে এক অন্যরকম অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়। তিনি জানান, টাকা-পয়সার অভাবে ঘর করতে পারেননি। বর্ষা ও শীতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে থাকবেন। আর কষ্ট হবে না তার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর পেয়ে খুশি হেনা বেগমও। তার বাড়ি ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামে। হেনা বেগম বলেন, 'আমার স্বামী একজন প্যারালাইজড রোগী। কোনোরকমে অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমি সংসার চালাই। এ দুর্যোগময় মূহূর্তে স্থায়ী একটি বাসস্থান পাওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি। আর কয়েকদিন পরেই নতুন ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারব। আমাদের মতো সহায়-সম্বলহীন পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।'
মুজিবর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী রিংকু বলেন, 'সবার জন্য ঘর- এমন কথা আমাদের দেশের মানুষ চিন্তাও করতে পারেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন সেই স্বপ্নের ঠিকানা।'
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাদের ঘর নাই, তাদের জন্য ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। কয়েকদিন আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ গোলাপগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণাধীন ঘর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আশা করছি কিছুদিনের ভেতরে ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।' তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সকলের নিকট দোয়া কামনা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, 'মুজিববর্ষে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মোট ২শ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে আমাদের এখানে ৭৬টি ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। খাস জমি খোঁজা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের ভেতরে উপকারভোগীদের মধ্যে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।'
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না- এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে চলেছে। এর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গৃহহীনরা স্বপ্নের ঘর উপহার পাচ্ছেন। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনগণের সকল চাহিদা নিশ্চিত করেছে সরকার। এখন যাদের ঘর নেই, তাদের জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করে সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে এখনও যা সম্ভব হয়নি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা তাই করে দেখিয়েছি।'
এফএম/আরআর-০৯