নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২১, ২০২১
০৬:৪১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২১, ২০২১
০৬:৪১ পূর্বাহ্ন
অপরিকল্পিত নগরায়ন, দখলদারি, মানুষের ব্যাক্তিস্বার্থে সিলেট নগরের ঐতিহ্য-বহন করা দিঘিগুলো নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। নগরের মজুমদার বাড়ি দিঘিসহ নগরের বিভিন্ন পুকুর-দিঘি ও জলাশয় রক্ষার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এ কথা বলেন। ঐতিহ্যবাহী দিঘিগুলো রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের যৌথ উদ্যোগে মজুমদার বাড়ি দিঘিরপাড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘সিলেটে অগনিত দিঘি ছিল। রামের দিঘি, তালদিঘি, সাগরদিঘি, চারাদিঘি, লালদিঘি, মুক্তার বিল, জল্লার বিলসহ অসংখ্য দিঘি-পুকুর ও জলাশয় আজ বিলীন হয়ে গেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দখলদারি, মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের কারণে সিলেটের ঐতিহ্য বহন করা এসব দিঘি নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘জলাধার রক্ষায় আইন থাকলেও সেগুলো না মানায় একের পর এক ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে আবাসন। আইন অনুযায়ী, কোনো অবস্থায় খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকালেও প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার, খাল-নদী ইত্যাদির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা যাবে না। জনস্বার্থে ও একান্ত প্রয়োজন হলে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করেই দখল ও ভরাট করে স্থাপনা স্থাপনা নির্মাণ চলছে। সিলেট নগরে হাতেগোণা পুকুর ও দিঘি কোনোমতে টিকে আছে। এর একটি হচ্ছে মজুমদার বাড়ির দিঘি। যদিও দিঘিতে পানির কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এখনও খনন করে দিঘিটিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় আজীবন সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কাশেম উজ্জ্বল, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, এলাকাবাসীর পক্ষে আনোয়ার বখত মজুমদার, পরিবেশকর্মী স্বপ্নীলা চৌধুরী, হাউজিং এস্টেট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ওমর মাহব্বু প্রমুখ।
বেলা সিলেটের ফিল্ড কর্মকর্তা সরদার আল আমিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য দেন, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। মূল বক্তব্য দেন বেলা সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার।
সাংবাদিক আল আজাদ বলেন, ‘নগর সুন্দর করতে হলে নগরের পুকুর-দিঘি-জলাশয় রক্ষা করতে হবে। মজুমদারবাড়ির দিঘিটি দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিত উপায়ে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে পানিশূন্য করা হয়েছে। দিঘির মূল অংশে সৃজন করা হয়েছে কলার বাগান। এই দিঘি শুধু একটি দিঘি নয়। এই দিঘির সঙ্গে সিলেটের কিংবদন্তির প্রাচীন ইতিহাস জড়িত। রাজা গৌড়গোবিন্দের দরবার মহল ও সেনা ছাউনিখ্যাত এই এলাকাকে বলা হত গড়দুয়ারা। মজুমদার পরিবার ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে জনকল্যাণের জন্য এই দিঘি ওয়াকফ করে দেন। কিন্তু এখন সেই দিঘিতে পানির কোনো অস্তিত্ব নেই। সুপরিকল্পিতভাবে এই দিঘিকে বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। দিঘিটি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুকুর-দিঘি-জলাশয় রক্ষায় শক্ত অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছেন। ইতোমধ্যে পুকুর দিঘি জলাশয় রক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও পুকুর-দিঘি-জলাশয় ভরাট করা বন্ধ হচ্ছে না। পুকুর-দিঘি-জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হলে স্থানীয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরিবেশ ধ্বংস করে আসামি দিনের পৃথিবীতে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। ভবিষ্যতে রাজনীতি, অর্থনীতি সব কিছু পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হবে। পরিবেশের শত্রুরা কোথাও জায়গা পাবে না।’
আরসি-০২