ওমর ফারুক, জকিগঞ্জ
জানুয়ারি ২০, ২০২১
০১:১৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২০, ২০২১
০৯:১৯ অপরাহ্ন
‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’- এমন বচন অনেকদিন আগে থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচলিত। কিন্তু সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ভোটাররা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রচলিত পুরোনো এই বচন অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দলীয় প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তির গুরুত্ব বেশি বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ভোটাররা।
জকিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন (নৌকা)। বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক মেয়র ইকবাল আহমদ তাপাদার (ধানের শীষ)। আর জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন পৌর জাপার সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক (লাঙল)। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ (জগ), উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ (নারিকেল গাছ), উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা (চামচ), পৌর আল ইসলাহ'র সভাপতি হিফজুর রহমান (মোবাইল ফোন) ও সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম (হ্যাঙ্গার)।
পৌর এলাকার একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে জকিগঞ্জ সদরে (বর্তমান পৌর এলাকা) আওয়ামী লীগের আধিপত্য বেশি। বর্তমানেও পৌর এলাকাকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে দাবি পৌরবাসীর। সে হিসেবে নৌকা প্রতীকের জয় পাওয়ার কথা। কিন্তু নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে পারেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ ও আব্দুল আহাদ। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিফজুর রহমানের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে নিজ ভোট ব্যাংকের ভোটারসহ দলের নেতা-কর্মীদের মনে খুব একটা জায়গা করে নিতে পারেননি। দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বর্তমান মেয়রের ভাতিজা সাবেক মেয়রপুত্র আব্দুল আহাদকে ও অন্য একটি অংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতা ফারুক আহমদকে দলীয় প্রার্থী চেয়েছিল। কিন্তু দল খলিল উদ্দিনের ওপরই আস্থা রেখেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে খলিল উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন তার ভাতিজা আব্দুল আহাদ। আর সর্বস্তরের নাগরিকের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফারুক আহমদ। ফলে দলীয় ভোট ৩ ভাগে বিভক্ত হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের যে কেউ বিজয়ী হলে উন্নয়ন কাজ বেশি হবে। দলীয় ভোটের বাইরে ব্যক্তি ইমেজে যিনি বেশি ভোট টানতে পারবেন তিনিই এগিয়ে থাকবেন।
এখানে বিএনপির দলীয় ইমেজ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছে না। ব্যক্তি ইমেজে ইকবাল আহমদ আলোচনায় আছেন। তবে তার ভোটেও ভাগ বসিয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা অনেকটা প্রকাশ্যেই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরব রয়েছেন। অবশ্য বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আহমদ তাপাদারের ব্যক্তি ইমেজ ভালো। তবে পৌর এলাকায় বিএনপি ঘরানার ভোট তেমন বেশি নেই। এরপরও যা আছে তাতে ভাগ বসাবেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা। ব্যক্তি ইমেজে ভোট টানার মতো যোগ্যতা রয়েছে ইকবাল আহমদের। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকের কারণে ভোটারদের কাছে তার এ ইমেজ খুব একটা কাজে আসছে না।
অন্যদিকে দলীয় বিদ্রোহী ছাড়াই লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক। পৌর এলাকায় জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য ভোট না থাকলেও ব্যক্তি ইমেজে আগে মেয়র হয়েছিলেন তিনি। এবার ভোটযুদ্ধ তার জন্য তাই অনেকটা চ্যালেঞ্জের। এর কারণ হিসেবে ভোটাররা মনে করেন, পাশাপাশি বাড়িতে থাকেন অপর মেয়র প্রার্থী বিএনপির ইকবাল আহমদ তাপাদার। নিজ ভোটকেন্দ্রে বিজয় নিশ্চিত করতে দু'জনই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আল্লামা ফুলতলী ছাহেবের প্রতিষ্ঠিত দলের প্রার্থী হিফজুর রহমানও ভোটের আলোচনায় রয়েছেন। তবে পৌর এলাকায় ক্বওমী ঘরানার ভোট বেশি থাকায় অনেকটা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ক্বওমী-ফুলতলীর পুরোনো দ্বন্দ্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনে আসছে। অন্যদিকে পরিকল্পনা করে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম। তিনি বিগত নির্বাচনে খেলাফত মজলিসের ঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবার স্বতন্ত্রভাবে হ্যাঙ্গার প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনিও আলোচনায় আছেন। তবে নিজের দল খেলাফত মজলিসের নেতা-কর্মীরা তার পাশে নেই বলে জানা গেছে।
এবার জকিগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৩ জন এবং নারী ভোটার ৬ হাজার ৩৪২ জন। ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ওএফ/আরআর-০৪