তিন বছর ধরে বন্ধ শেরপুর নৌবন্দর, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জানুয়ারি ১৯, ২০২১
১২:৩৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১৯, ২০২১
১২:৩৭ পূর্বাহ্ন



তিন বছর ধরে বন্ধ শেরপুর নৌবন্দর, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

সিলেটের অন্যতম দীর্ঘ নদী কুশিয়ারা। প্রমত্তা কুশিয়ারার অবশ্য নেই আগের মতো রূপ-যৌবন। নদীর বুকে পাল তোলা বাহারী নৌকারও দেখা মেলে না সচরাচর। অপরদিকে সড়কপথের ব্যাপক উন্নতির ফলে নৌপথের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন কমে আসায় কুশিয়ারার তীরবর্তী শেরপুর নদীবন্দরটি কার্যক্রমও ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে সরকার প্রতিবছর ১৫-২০ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

আজ থেকে প্রায় দুই শতাধিক বছর পূর্বে শেরপুর স্টিমার ঘাটে অনেক বড় বড় স্টিমার ভিড়ত। জনতা, সইপট, লার্ক নামক পণ্যবাহী স্টিমার সুদূর কলকাতা থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট সদর, আসামের করিমগঞ্জ, বদরপুরে যাতায়াত করত। ফলে শেরপুর স্টিমার স্টেশনের কদর ছিল তৎকালীন আসাম প্রদেশজুড়ে। কালের পরিবর্তনে খরস্রোতা কুশিয়ারা নদীর বিধ্বংসী ভাঙনে ক্রমেই পাল্টে গেছে নদীর ভৌগলিক গতিপথ। তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেক পূর্ব থেকে এ ঘাটে বন্ধ হয়ে গেছে স্টিমারের আনাগোনা।

অন্যদিক থেকে শেরপুরের লঞ্চযোগে সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, মার্কুলী, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং এলাকার মানুষ যাতায়াত করতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালের দিকে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ভাটি অঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার্থে ও দ্রুত যাতায়াতের লক্ষ্যে শেরপুর উত্তরপাড়ে লঞ্চঘাটের অনুমোদন দিয়ে একটি জেটি স্থাপন করে। পরে নৌপথে যাত্রীসাধারণের চাপ বেড়ে গেলে ১৯৯৪ সালে শেরপুর দক্ষিণপাড়ে আরও একটি জেটি স্থাপন করে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। ফলে নৌকা, লঞ্চ, মালবাহী কার্গো আর যাত্রী সমাগমে সবসময় কর্মচঞ্চল থাকত শেরপুর নদীবন্দরটি।

লঞ্চ মাস্টার আমিনুল হোসেন জানান, শেরপুর লঞ্চঘাট থেকে আগে প্রতিদিন প্রায় ২০/২৫টি লঞ্চ ভাটির পথে যাতায়াত করলেও বর্তমানে তা কমে ৩/৪টিতে দাঁড়িয়েছে। কুশিয়ারার তলদেশ স্থানে স্থানে ভরাট ও মানবসৃষ্ট নানা জঞ্জাল পাশ কাটিয়ে লঞ্চযাত্রীদের দ্রতসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি হরমুজ আলী বলেন, 'সড়ক পথ সহজলভ্য হওয়ার আগে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল স্টিমার, লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা। ব্রিটিশ আমলে ছাতকের চুনাপাথর বোঝাই অনেক জাহাজ এই নৌপথ দিয়ে কলকাতা যেত। অনেকদূর থেকে জাহাজের সাইরেন শুনতাম আমরা। স্টিমার-লঞ্চ কত চড়েছি তার হিসাব নেই। বিয়েতে লঞ্চযোগে যেতে বেশ মজা হতো। আজ সবধরনের যান আধুনিক হয়েছে, কিন্তু শেরপুর-মার্কুলী-আজমিরী রুটের লঞ্চগুলো সেই আগের মতোই আছে। আর তাই দিন দিন কমে যাচ্ছে লঞ্চযাত্রীর সংখ্যা।'

শেরপুর লঞ্চঘাটের ইজারাদার ইমরান হোসেন জানান, শেরপুর সিলেটের চার জেলার মিলনস্থল হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু কুশিয়ারার তলদেশে চর জেগে ওঠায় ২০১৭ সাল থেকে ভাটি এলাকার চামড়া, আজমিরীগঞ্জ কিংবা উজানের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও নৌকা শেরপুর জেটিঘাট থেকে যাতায়াত করছে না। এতে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ২০ লাখ টাকার ইজারামূল্যের জেটিঘাট দু'টি এখন ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা দিতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, 'শেরপুর নৌবন্দর এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য পরিবহনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনায় সড়ক যোগাযোগের সঙ্গে নদীপথ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এ বিবেচনায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুশিয়ারা নদী খনন, ডান তীরে (ওসমানীনগর অংশ) ভাঙনরোধে ব্লক স্থাপনসহ একাধিক উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।'

 

ইউডি/আরআর-০৩