চলতি মাসেই ঘর পাচ্ছে ১৪০০ ভূমিহীন পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ১৭, ২০২১
০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১৭, ২০২১
১০:০১ অপরাহ্ন



চলতি মাসেই ঘর পাচ্ছে ১৪০০ ভূমিহীন পরিবার

মাথা গোঁজার জায়গা নেই। তাই কখনও অন্যের বাড়িতে, কখনও রাস্তায় কাটে রাত। ঝড়–বৃষ্টি-শীতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলে না আহার। সিলেটে এরকম অসহায়, ভূমিহীন ও ঘরহীন মানুষের জন্য আধাপাকা ঘর বানিয়ে দিচ্ছে সরকার।

ঘোষণা অনুযায়ী মুজিববর্ষে সিলেট জেলায় ভূমিহীনদের জন্য ৪ হাজার ১৭৮টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১ হাজার ৪০৬টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি মাসেই অসহায় পরিবারগুলোকে এসব ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

ঘর নির্মাণ হচ্ছে-সিলেট সদর উপজেলায় ১৪৪টি, দক্ষিণ সুরমায় ১২০টি, ওসমানীনগরে ৫৩৩টি, বিশ^নাথে ৬৬৯টি, বালাগঞ্জে ৮৭৫টি, গোলাপগঞ্জে ২০০টি, বিয়ানীবাজারে ১০৪টি, গোয়াইনঘাটে ৫০০টি, জৈন্তাপুরে ৩৩০টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৩০টি, কানাইঘাটে ১৯৩টি, জকিগঞ্জে ১৩০টি ও কোম্পানীগঞ্জে ২৫০টি। ইতোমধ্যে সদর উপজেলায় ১৭টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে।

এছাড়া বালাগঞ্জ উপজেলায় ১৪০টি, বিশ্বনাথে ১২০টি, কোম্পানীগঞ্জে ১৫৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৭২টি, গোলাপগঞ্জে ৭৭টি, গোয়াইনঘাটে ২৫০টি, কানাইঘাটে ১৯৩টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ১২০টি, জকিগঞ্জে ৫৫টি, ওসমানীনগরে ১৪০টি, বিয়ানীবাজারে ৫০টি ও দক্ষিণ সুরমায় ১৫টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মুজিববর্ষে ঘর ও ভূমিহীনদের (ক শ্রেণির) ঘরসহ ভূমি উপহার দিতে সরকারি জায়গায় গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ২ শতক ভূমিতে প্রতিটি টিনশেডের আধাপাকা ঘর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ঘরে বারান্দাসহ দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি বাথরুম ও অন্যান্য উপকরণ থাকবে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গৃহ ও ভূমিহীনদের তালিকা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভূমিহীনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

জেলার ওসমানীনগরে ৫৩৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছে। এর মধ্যে ২১৫টি পরিবারকে একক গৃহ এবং ৩১৮ পরিবারকে যৌথভাবে ঘর দেওয়া হচ্ছে। ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘মুজিববর্ষে উপজেলায় ৫৩৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ১০০টি ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ঘর নির্মাণের কাজ দ্রুত চলছে।’

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় ভূমিহীনদের নান্দনিক ৬৬৯টি ঘর দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি খাস ২ শতক ভূমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে টিনশেডের নজরকাড়া পাকা ঘর। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) নির্মাণ কাজ তদারকি করছেন। মুজিববর্ষেই অধিকাংশ গৃহহীন পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল বলেন, ‘যাদের জন্য ঘর প্রস্তুত করা হচ্ছে, প্রথমে তাদের নামে জমি নামজারি করা হয়েছে। ঘরগুলো প্রস্তুত হওয়ার পর উপকারভোগীদের হাতে চাবি তুলে দেওয়া হবে। চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে একসঙ্গে ভূমিহীনদের মধ্যে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। ওইদিনই সংশ্লিষ্টদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হবে।’

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল লেইছ চৌধুরী বলেন, ‘এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমার ইউনিয়নে ভূমিহীন ৮৫ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বন্যা ও করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্যগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আশা করছি এ বছরের মধ্যে সবগুলো ঘর নির্মাণ শেষ হবে।’

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘দক্ষিণ সুরমায় ১২০টি হতদরিদ্র পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। চলতি মাসে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ১৫টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি বছরেই বাকি ঘর প্রস্তুত করা হবে।’

সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো.ফজলুল কবীর জানান, মুজিববর্ষে সিলেট বিভাগে ৯ হাজার ৯৪৮টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪ হাজার ১৭৮টি, মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৭৫টি, হবিগঞ্জে ৭৮৭টি ও সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৯০৮টি ঘর দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫০ ভাগ ঘর নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রস্তুতকৃত ঘরগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ভূমিহীনরা নগদ আরও চার হাজার টাকা করে পাবেন। এরপর যেসব ঘর তৈরি হবে, তাৎক্ষণিক ভূমিহীন পরিবারকে তা হস্তান্তর করা হবে।’

এসএইচ/বিএ-০১