নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১৫, ২০২১
০৬:২০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৫, ২০২১
০৬:২০ পূর্বাহ্ন
সিলেটের হরিপুরে ১৯৫৫ সালে দেশের প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ থেকে ১৯৬০ সালে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। দেশে শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহারও সেই প্রথম। আর ১৯৮৬ সালে এই গ্যাসক্ষেত্রেরই ৭ নম্বর কূপে পাওয়া যায় দেশের একমাত্র তেলক্ষেত্র। আর এ বছর গ্যাসক্ষেত্রের ৯ নম্বর কূপে তেল খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে চার স্তরের গ্যাসের সন্ধান। চলতি জানুয়ারি মাসেই এই কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল তেল পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে। কিন্তু তেলের উপস্থিতি থাকার কথা যে স্তরে, সেই স্তর পর্যন্ত যাওয়ার আগেই মিলেছে গ্যাসের সন্ধান। দেশের সবচেয়ে পুরনো এই গ্যাসক্ষেত্রের ৯ নম্বর কূপটিতে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)।
হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে পেট্রোবাংলার অধীন কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে এই গ্যাসক্ষেত্রের ৯ নম্বর কূপে ২ হাজার ৭২ থেকে ২ হাজার ৯৪ মিটার গভীরতায় তেল রয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী কূপটি খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসজিএফএল’র ঠিকাদার হিসেবে ত্রিমাত্রিক জরিপ শেষে গত ২ অক্টোবর নতুন এই কূপটির (৯ নম্বর) খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স। টানা ৯৩ দিন খনন শেষে গত ৪ জানুয়ারি প্রায় ১ হাজার ৯৯৮ মিটার গভীরতায় গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এসজিএফএল কর্মকর্তারা বলছেন, তেল অনুসন্ধানের জন্য খনন কাজ শুরু করলেও কিছু জটিলতার কারণে তেলের সম্ভাব্য উপস্থিতির কাক্সিক্ষত স্তর পর্যন্ত রিগ বা খননযন্ত্র পৌঁছাতে পারেনি। সেটি ২ হাজার ২৫ মিটারে আটকে যায়। তবে এর আগেই মিলেছে গ্যাসের সন্ধান। ফলে এই কূপ থেকে আপাতত তেলের স্তর বাদ দিয়ে এর ওপরে চিহ্নিত চারটি স্তর থেকে গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ড্রিল স্টেম টেস্ট (ডিএসটি) করছে বাপেক্স। এখান থেকে প্রতিদিন সাত মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৯ নম্বর কূপের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, নতুন এ কূপে গ্যাস রয়েছে-সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ৪ জানুয়ারি গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর কূপের ফ্লেয়ার লাইনে উঠে আসা গ্যাসে আগুনের শিখা জ্বালিয়ে গ্যাসপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়। এখন পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। চলতি জানুয়ারি মাসেই এখান থেকে পূর্ণোদ্যমে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব বলে আমরা আশা করছি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে পুরনো গ্যাসক্ষেত্র সিলেটের এই হরিপুর। ১৯৫৫ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। ১৯৬০ সালে এই গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ থেকে প্রতিদিন ৪০ লাখ ঘনফুট করে গ্যাস সরবরাহ করা হতো ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। দেশের কোনো শিল্প কারখানায় গ্যাসের ব্যবহারের সেটিই প্রথম নজির।
এরপর ১৯৬১ সালে এই গ্যাস ক্ষেত্রের আরেকটি কূপ থেকে ৩০ মাইল দীর্ঘ ও ৮ ফুট ব্যাসের পাইপ লাইনের মাধ্যমে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত এই হরিপুরে মোট ছয়টি কূপ খনন করা হয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও এখানকার দুইটি কূপ চালু ছিল।
দেশের প্রথম এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে কেবল গ্যাস নয়, তেলও পাওয়া গেছে। ১৯৮৬ সালে হরিপুরে ৭ নম্বর কূপ খনন করলে সেটিতে তেলের সন্ধান মেলে। টানা সাত বছরে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৯ ব্যারেল তেল উত্তোলনের পর ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে কূপটি থেকে তেলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৮৯ সালে হরিপুরে ৮ নম্বর কূপে খনন কাজ শুরু হয়। তেল পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে খনন করলেও ওই কূপেও পাওয়া যায় গ্যাস।
সবশেষ ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে ৯ নম্বর কূপটি খনন করা হচ্ছে। তবে এই কূপটি থেকেও তেল নয়, উত্তোলন করা হচ্ছে গ্যাস।
এএন/বিএ-০২