দুদিন বারান্দায় পড়েছিল সুচন্দার শবদেহ

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জানুয়ারি ১৩, ২০২১
০৭:৫৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১৩, ২০২১
০৭:৫৬ অপরাহ্ন



দুদিন বারান্দায় পড়েছিল সুচন্দার শবদেহ

সিলেটের ওসমানীনগরের হতদরিদ্র পরিবারে গৃহবধূ সুচন্দা দেবনাথ (২৬)। গত সোমবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে প্রসব ব্যথায় মৃত্যু হয় তার। কিন্তু ভাগ্য বিরূপ। মামলার বেড়াজালে আটকে গেছে দাহকার্য। দুদিন বারান্দায় পড়ে থাকা শবদেহের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের হিমাগারে।  

প্রায় ১১ মাস আগে উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের নিজ কুরুয়া (নাথপাড়া) গ্রামের রাজকুমার দেবনাথের ছেলে বিধান চন্দ্রের সাথে বিয়ে হয় কানাইঘাট উপজেলার হাজীগঞ্জ গ্রামের জিতেন্দ্র দেবনাথের কন্যা সুচন্দার। বিয়ের পর আর্থিক অসচ্ছল পরিবারে কোনভাবে তাদের জীবন কাটছিলো। সুচন্দা প্রথমবারের মতো সন্তান সম্ভবা হলে চিকিৎসার জন্য গত ৩ জানুয়ারি বিধান চন্দ্র তাকে ছোটবোন সিলেট সদর উপজেলার বটেশ্বরস্থ রতœা দেবনাথের বাড়িতে প্রেরণ করেন। সেখানে থাকাবস্থায় রবিবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সুচন্দার প্রসব ব্যথা উঠে। দ্রæত সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় সুচন্দার। ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে সোমবার ভোরে সুচন্দার লাশ তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে এসে সৎকারের আয়োজন করলে বাধা হয়ে দাঁড়ান সুচন্দার বাবার বাড়ির লোকজন। তাদের অভিযোগ সুচন্দাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এক পর্যায়ে সুচন্দার বড় ভাই অসিম চন্দ্র দেবনাথ ওসমানী নগর থানায় অভিযোগ করলে থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শাহপরান থানায় মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরবর্তী নিহতের বড় ভাই শাহপরান থানায় হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন।  

এ দিকে মামলার টানাপোড়নে আটকে যায় দাহকার্য। সোমবার ভোর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুচন্দার শবদেহ পড়ে থাকে বিধান চন্দ্রের বসত ঘরের বারান্দায়। পাশে বসে থাকেন শাশুড়ি স্বর্ণ দেবনাথ। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সুচন্দার বাবার বাড়ি লোকজন শবদেহ কুরুয়া থেকে নিয়ে রাখেন ওসমানী হাসপাতালের হিমাগারে। এদিকে স্বজন হারানোর শোক ও মামলার আতংকে বিধান চন্দ্রের পরিবারের লোকজন দিশেহারা।

এ ব্যাপারে সুচন্দার বড় ভাই অসিম চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

বিধান চন্দ্রের ছোটভাই বিকাশ দেবনাথ বলেন, প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে আমার বৌদি (ভাবি) মারা গেছেন। এ নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এরমধ্যে মামলা দিয়ে আমাদের নাজেহাল করা হচ্ছে। 

এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, এই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা (নম্বর ১৪) দায়ের করা হয়েছে।

ইউডি/আরসি-০৩