নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ০৫, ২০২১
০৮:৪৭ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৫, ২০২১
০৮:৪৭ অপরাহ্ন
করোনা পরিস্থিতিতে ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্প’ এর কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে সিলেট নগরের চৌহাট্টাসহ গুরুত্বপূর্ণ ৭টি পয়েন্ট আইপি ক্যামেরা ও ১০টি ওয়াইফাই এক্সেস পয়েন্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরের সড়কগুলোতে খোঁড়াখুড়ি ও আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল টানার কাজ চলমান থাকায় এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের কার্যক্রম গতিশীল হবে এবং যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মধূসুদন চন্দ সিলেট মিররকে জানান, করোনার কারণে কার্যক্রম বন্ধ ছিল, আবার শুরু হয়েছে। শিগগির এ বিষয়ে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ জানতে পারবেন নগরবাসী।
এ প্রকল্পে দু’টি কম্পনেন্টকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে অপরাধীর চেহারা শনাক্তকরণ (ফেইস রিকগনিশন) ক্যামেরা। এর সুফলও পেতে শুরু করেছেন নগরবাসী। দ্বিতীয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ধাপটি হচ্ছে, নগরজুড়ে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন গড়ে তোলা। এ প্রকল্পটিও ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে।
আইপি ক্যামেরার দায়িত্বে মহানগর পুলিশ: ডিজিটাল সিলেট নগর গড়ে তোলার এই উদ্যোগে সবার আগে নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়। নাম দেওয়া হয়েছে ‘আইপি ক্যামেরা বেইসড সার্ভিলেন্স সিস্টেম’। এর মধ্যে বিশেষ ধরণের কিছু ক্যামেরা রয়েছে, যা আধুনিক বিশে^ অপরাধ দমনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।
প্রকল্পের অধীনে নজরদারির জন্য নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি ক্যামেরা) স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে বিশেষ ধরণের ১০টি ফেস রিকোগনিশন (এফআর) বা ব্যক্তি শনাক্তকরণ এবং ১০টি অটো নাম্বার প্লেট রিকোগনিশন (এএনপিআর) তথা যানবাহনের নাম্বার প্লেট চিহ্নিতকরণ ক্যামেরা রয়েছে। এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘আইপি ক্যামেরা কম্পনেন্ট’ এর দায়িত্ব থাকবে সিলেট মহানগর পুলিশের হাতে। এ লক্ষ্যে নগরের কোতায়োলী মডেল থানায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২০ জুন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক এটি উদ্বোধন করেন। এর আগে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসএমপি’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ডিজিটাল সিলেট সিটি কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মধূসুদন চন্দ বলেন, এসব ক্যামেরার সাহায্যে যানবাহনের ডাটা সংগ্রহ ও কুখ্যাত অপরাধী সনাক্তকরণে কাজ করবে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। নগরর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ, সড়ক ও জনবহুল স্থানে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পিলার স্থাপন করে ১১০টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি জুমিং সুবিধা রয়েছে। ১১০ ক্যামেরার মধ্যে ১০৩টি ক্যামেরা বর্তমানে কার্যকর। তিনি বলেন, পুলিশ যে কোনো অপরাধীর ছবি দিয়ে আইপি ক্যামেরার সার্ভারে অনুসন্ধান (সার্চ) করতে পারবে। ওই অপরাধী যদি আইপি ক্যামেরার আওতাভুক্ত কোনো এলাকায় চলাফেরা করেন, তবে সার্ভার তা শনাক্ত করে জানিয়ে দেবে।
অন্য ৭ ক্যামেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগরের চৌহাট্টা থেকে বন্দরবাজার সড়তে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎলাইন স্থাপন ও নগরে আন্ডারগ্রাইন্ড ক্যাবল টানার কাজ চলমান থাকায় বাকি ক্যামেরাগুলো এই মুহূর্তে সক্রিয় করা যাচ্ছে না।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, এসব ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তে সুবিধা পাচ্ছে এসএমপি। এরই মধ্যে এরকম কয়েকটি ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সক্ষম হয়েছে।
নগরে ৬২ এলাকায় বিনামূল্যে ওয়াইফাই : ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের আওতায় নগরের ৬২ এলাকায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব জায়গায় ১২৬টি ওয়াইফাই এক্সেস পয়েন্ট (এপি) রয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু হয়। এই কম্পোনেন্টের দায়িত্ব পাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এসএমপি’র মতো একইদিনে সিসিকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা হয়। তবে, বর্তমানে অন্তত ১০টি এক্সেস পয়েন্ট অকার্যকর বলে জানা গেছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এসএসআইডি পদ্ধতিতে ব্যবহারকারিরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং পাসওয়ার্ড ‘জয় বাংলা’ লিখে বিনামূল্যে যে কেউ বিনামূল্যে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। পর্যটকরাও বিনামূল্যে এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। প্রতিটি সেকেন্ডে এক্সেস পয়েন্টের চতুর্দিকে ১০০ মিটার এলাকায় ব্যান্ডউইথ থাকবে ১০ মেগাবাইট বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা।
তবে, নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টাসহ কিছু এলাকায় ওয়াইফাই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রবিবার জিন্দাবাজার পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নাবিল নামের একজন কলেজ শিক্ষার্থী ওয়াইফাই সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন। অন্যান্য এলাকাতেও সংযোগ পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, যে ১০টি এপি থেকে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না তা কার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়ার আগেই এগুলো কার্যকর করা হবে।
প্রথমদিকে অগ্রাধিকার এই দু’টি ধাপ ছাড়াও আরো ৮টি সেবা নিশ্চিত করার কথা ছিল। সেগুলো হচ্ছেÑ কম্পিউটার লিটারেসি সেন্টার, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল অটোমেশন, সিলেট সিটি করপোরেশনের দশ সেবাকে অটোমেশন করা, নাগরিক সুবিধা উন্নত করা ছাড়াও পর্যটকদের জন্য ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটাল টেলিফোন ডিরেক্টরি এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থা থেকে প্রবাসীদেরকে বাড়তি সুবিধা দিতে তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেস তৈরি করা।
তবে, শেষদিকে এসে এই ৮টি কম্পোনেন্ট-এর চিন্তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে হাসপাতাল অটোমেশনের একটি বিশেষ চিন্তা রয়েছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সিলেট নগরর ডিজিটাইজেশন কাজটি বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত ছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
আরসি-০৯