নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ০৩, ২০২১
১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৩, ২০২১
০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
কোনো উৎসব নেই। অতিথিরাও অলংকৃত করেননি আসন। সাজানো মঞ্চে মাইকের সামনে কোনো বক্তা নেই। কোথাও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, কোথাও শিক্ষার্থী নিজে দাঁড়িয়ে আছেন লাইনে। সবার যে মাস্ক আছে, তা নয়। তবে তিন ফুট না হলেও বেশ দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই। বই নিতে করোনাকালে এই লাইন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় এমন দৃশ্য দেখা গেল, সিলেট সদর উপজেলার দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের ৬টি কক্ষের সামনে, বারান্দায় দুদিকে গ্রিল ঘিরে টেবিল নিয়ে বসেছেন শিক্ষকরা। গ্রিলে শ্রেণির নাম লেখা কাগজ ঝুলানো। টেবিলের পাশে বেঞ্চে রাখা বই। টেবিলে বই বিতরণ খাতা পূর্বেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করে ফিতা দিয়ে বাঁধা বই নিয়ে দ্রুত সরে যাচ্ছেন। সবাই যে দ্রুত সরে যাচ্ছেন, তা-ও নয়। জটলাও করতে চাচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ কণ্ঠ শোনা গেল প্রধান শিক্ষকের। তিনি হ্যান্ড মাইকে সবার উদ্দেশে বলছেন, ‘বই হাতে পেলে চলে যান। দূরত্ব বজায় রাখুন। মাস্ক ব্যবহার করুন।’
এদিকে, মূল ফটকে বড় একটি ব্যানার দৃষ্টি গোচর হলো। সেখানে লেখা, ‘কথা মোদের একটাই, মাস্ক ছাড়া সেবা নেই।’ কিন্তু কিছু অভিভাবক বা শিক্ষার্থী সম্ভবত তা মানতে নারাজ। তারা মাস্ক ছাড়াই বই নিতে এসেছেন। দেখা গেল, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তাঁদেরকে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন।
একটু সামনে যেতেই পাওয়া গেল অস্থায়ীভাবে নির্মিত হাত ধোয়ার টেপ। সাবান ও স্যানিটাইজারও রাখা সেখানে। বিদ্যালয়ের দপ্তরী সবাইকে হাত ধোয়ার অনুরোধ করছেন। কেউ হাত ধুচ্ছেন, কেউ স্যানিটাইজার লাগিয়েই চলে যাচ্ছেন। দেখা গেল বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) সদস্য ও কয়েকজন অভিভাবক নিজ থেকে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন।
সকাল ১১টার দিকে এলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফছর আহমদ। একটু পরেই এলেন সিলেট সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের প্রশিক্ষক এ কে এম আনিছুজ্জামান ভূঁইয়া। কিন্তু সেখানেও কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। কয়েকজন ছাত্রী বায়না ধরল-অতিথির হাত থেকে বই নেবে। আফছর আহমদ দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি’র সভাপতি। তাই তিনি বাধ্য হলেন, অন্তত বই তুলে দিয়ে ফটোসেশনে। এ সময় অবশ্য তিনি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে মাস্ক পরার ব্যাপারে কথা বলেন।
অনুষ্ঠান না হওয়া প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষা অফিস থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, কোনো ধরনের অনুষ্ঠান বা উৎসব ছাড়াই স্বাস্থবিধি মেনে এবারের বই বিতরণ করতে হবে। তাই এই ব্যবস্থা। অতিথি যারা এসেছেন, তারা নিজেদের ভালোলাগা থেকেই এসেছেন। যেহেতু সবাই প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত, তাই তাঁদের এই আগমন বিদ্যালয়ের জন্য আনন্দের। তবে সব কিছু হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।’
সিলেট সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার সুভাষ চন্দ্র চক্রবর্তী মুঠোফোনে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকল বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা করে বই বেঁধে প্রস্তুত ছিলেন। সকল শিক্ষকের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল শিশুর হাতে শতভাগ বই পৌঁছে দিতে প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. নাহিদ পারভীন জানান, এ বছর সারা দেশের মতো প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন টিম তৈরি করে আজ বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করছি। সব বিদ্যালয়েই সরকারের নির্দেশনা মেনে বই বিতরণ করা হচ্ছে।’
এসএন/বিএ-০২