১৩ মাসেও হয়নি কমিটি, আহ্বায়ক কমিটিকে ভেঙে দেওয়ার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ০৮, ২০২০
০৮:২০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ০৮, ২০২০
০৮:২১ পূর্বাহ্ন



১৩ মাসেও হয়নি কমিটি, আহ্বায়ক কমিটিকে ভেঙে দেওয়ার দাবি

সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ১৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনও সম্মেলন হয়নি; হয়নি কমিটিও। এ অবস্থায় আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে নতুন করে কমিটির গঠনের দাবি জানিয়েছেন একাংশ।  

সোমবার সিলেট নগরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন আহ্বায়ক কমিটির নয়জন সদস্য।

তারা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্তরা পরস্পর বিরোধী ও হঠকারী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার কারণে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ অবরূদ্ধ করে চক্রান্তকারী চক্র দলকে কুক্ষিগত করেও রেখেছে। এতে করে দলের অভ্যন্তরে কোন্দলও সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্যদিকে, জেলা বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি করতে সরকারের ইন্ধনে এ সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। সংবাদ সম্মেলনকারী সদস্যরা ‘বিপথগামী’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রায় এক বছর পার হয়েছে। এরপরও এ কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার কার্যকর সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। উল্টো তিনি নিরপেক্ষতার পরিবর্তে সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের নির্দেশনা অনুসারেই একপেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এ কারণে জেলা বিএনপির সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে তিনি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২১ সদস্যের উপজেলা কমিটি গঠন করেন। তখন প্রতিবাদের মুখে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল একপেশে এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এরপর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সাংগঠনিক অচলাবস্থা নিরসনে প্রতিটি উপজেলা কমিটিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের পক্ষের ৬ জন নতুন সদস্যের তালিকা দেয়ার নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলনও তালিকা চাইলে আমরা তা সরবরাহ করি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক চক্রান্ত করে মিলন ও বর্তমান আহ্বায়ককে ব্যবহার করে আমাদের ৬ জনের নাম না দিয়ে আবারও নিজের পক্ষের লোকজনের নাম ঘোষণা করেন। এতে জেলা বিএনপিতে সংকট ক্রমাগত বাড়ছে।’

সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যকে না জানিয়ে একতরফাভাবে বিভিন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন করে উপজেলায় বিতরণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এতে বলা হয়, ‘আগামী কাউন্সিলে নিজেদের গ্রুপকে বিজয়ী ঘোষণা করাতে তারা উপজেলাগুলোতে নিজেদের পক্ষের লোকদের নিয়ে ঘরে বসে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিট কমিটি ঘোষণা হলেও তারা ওই তালিকা থেকে নিজেদের অপছন্দের নেতাদের নাম কেটে নিজেদের গ্রুপের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন।’ যা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকেও তারা জানিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

লিখিতি বক্তব্যে অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিভাগীয় নেতৃবৃন্দের উদাসীনতায় সাংগঠনিক বিশৃঙখলা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে বসে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের স্বার্থের প্রতি তাদের আন্তরিকতাও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। এ অচলাবস্থা নিরসন না হলে আগামী কাউন্সিল হবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহও রয়েছে।’

সুযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ অবরুদ্ধ করে চক্রান্তকারীরা আজ দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছে উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন বলেন, ‘কোন্দল সৃষ্টিকারীর মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে সিলেট জেলা বিএনপিকে বাঁচাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ এখনই প্রয়োজন। কারণ জেলা আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারকে পকেটে পুরে আবুল কাহের শামীম গংদের কার্যক্রম দলটাকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিজেদের সুবিধামতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। একটি শক্তিশালী কাউন্সিলের জন্য এসব কার্যক্রম কঠিন অন্তরায়।’ তিনি এসব ব্যাপারে দ্রুত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, আহমেদুর রহমান চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন ও মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে, সিলেট জেলা বিএনপি’র ব্যানারে আয়োজিত সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনের সঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। এক বিবৃতিতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি একাধিক সূত্রে জানতে পেরেছি- সোমবার বিকেলে নগরের একটি রেস্টুরেন্টে কতিপয় বিপথগামী নেতাকর্মী জেলা বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি করতে সরকারের ইন্ধনে জেলা বিএনপির ব্যানারে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি কোনো কিছু অবগত নয়।’

কামরুল হুদা জায়গীরদার আরও বলেন, ‘জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে জেলার আওতাধীন সকল উপজেলা ও পৌর ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌর কমিটি তাদের আওতাধীন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করেছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি একটি সুন্দর ও অর্থবহ কাউন্সিল আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ত্যাগী ও সক্রিয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে তৃনমূল বিএনপি পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘দলের এই দুঃসময়ে আওয়ামী সরকারের ইন্ধনে কতিপয় নেতাকর্মী জেলা বিএনপিতে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা জেলা বিএনপির ব্যানারে নগরে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করছে। যা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। এই সাংবাদিক সম্মেলনের ব্যাপারে জেলা বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর সম্পর্ক নেই।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট জেলা বিএনপির ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই কমিটিকে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরসি-০৫