কমলগঞ্জে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন তাঁরা

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


জুন ০৭, ২০২০
০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৭, ২০২০
০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন



কমলগঞ্জে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন তাঁরা

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সংক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাও।

এমনই তিনজন হলেন কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমিত্র সিনহা, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) সুনির্মল কুমার সিংহ ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আশরাফুল আলম। করোনা সংকটের শুরু থেকেই পরিবারের কথা না ভেবে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। কারও মাঝে করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। আবার করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের পর সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানোর দায়িত্বও পালন করছেন তাঁরা।

তাঁদের পরিবারের সদস্যরা করোনার আতঙ্কে থাকলেও নমুনা সংগ্রহের এ দায়িত্বপালনে সম্মতি দিয়েছেন সবার পরিবার। আর এতে নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্বপালন করতে পারছেন এই তিনজন। তাঁরা বিরামহীন দিন-রাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও আক্রান্তদের নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে সচেতন লোকজন যখন নিরাপদে বাসা-বাড়িতে থাকছেন, তখন কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসিমুখে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মহামারীর এই সময়ে দায়িত্বপালনে নানা প্রতিকূলতা থাকলেও সেবা দিতে পেরেই গর্বিত তাঁরা।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) সুর্নিমল কুমার সিংহ বলেন, এ রকম মহৎ কাজে জড়িত হয়ে মানুষের সেবা দিয়ে যেতে পারছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আশরাফুল আলম বলেন, সরকারি চাকরির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে। এ কারণে আমরা যত্ন সহকারে উপসর্গের রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করি। এ জন্য বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী কেউই আমাদের কাছে আসতে চায় না। তাদের ধারণা, আমরা যেন করোনাভাইরাস নিয়ে বসে আছি। তখন মনে মনে কিছুটা কষ্ট পাই।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, আজ শনিবার (৬ জুন) ৩ জনসহ কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৬৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট ২৭ জনের পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে, সুস্থ হয়েছেন ৭ জন। করোনার সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলেই কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিম নমুনা সংগ্রহ করতে ছুটে যায়। ঈদসহ অনেক আনন্দকে পাশ কাটিয়ে দিনের পর দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরিবার-পরিজনের মায়া ত্যাগ করে এই সংকটময় মুহূর্তে তাঁরা মানবতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা চিরকাল মনে রাখবে কমলগঞ্জবাসী। তাঁদের ত্যাগ ও অবদান নিঃসন্দেহে অভিবাদন পাওয়ার যোগ্য। করোনাকালে করোনাযুদ্ধের অগ্রসৈনিক এই স্বাস্থ্যকর্মীরা।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. এম. মাহবুবুল আলম ভুঁইয়ার নির্দেশনায় নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নমুনা সংগ্রহ টিমের সদস্যরা হলেন- মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমিত্র সিনহা, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) সুর্নিমল কুমার সিংহ ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আশরাফুল আলম। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন মেডিকেল অফিসার ডা. জয়দ্বীপ পাল, আব্দুল আউয়াল ও অভিজিত সিংহ।

এই করোনাযোদ্ধারা জানান, সমাজের অনেকেই করোনা রোগীদের পাশাপাশি আমাদেরকেও খারাপ চোখে দেখে, খারাপ মন্তব্য করে। তবুও পরিবারের সবাইকে নিরাপদ রেখে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিজের কর্মক্ষেত্রকে সম্মান করে কাজ করে যাচ্ছি।

তারা সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, করোনায় সংক্রমিত হওয়া কোনো অপরাধ নয়। করোনা পজিটিভ মানেই মৃত্যু নয়। করোনা রোগীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখান। সামাজিক সচেতনতাই পারে করোনার ভয়কে জয় করতে।

আলাপকালে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম. মাহবুবুল আলম ভুঁইয়া বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই তিনজন সার্বক্ষণিক নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। এছাড়া আরও তিনজন পর্যায়ক্রমে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন। এ পর্যন্ত উপজেলায় ৩৬৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলায় মোট ২৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। পজিটিভদের মধ্যে ৭ জন সুস্থ আছেন। তারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড-১৯ এর সুরক্ষা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি বেড নিয়ে আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে।

 

এসডি/আরআর-০৯