নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ০৮, ২০২০
১২:৩৩ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৯, ২০২০
০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
সিলেট নগরের কমলাবাগান এলাকার প্রবেশমুখে কাগজে ‘লকডাউন’ লিখে রেখেছেন এলাকাবাসী। ছবি-সিলেট মিরর
সিলেট ও মৌলভীবাজারে গত রবিবার করোনাভাইরাসের দুজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর স্বেচ্ছায় ‘লকডাউনে’ চলে গেছেন বৃহত্তর সিলেটের চার জেলার প্রায় শতাধিক এলাকার বাসিন্দা। গত তিনদিনে এ লকডাউনের ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন পুরো জেলাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করে দিয়েছে। এসব এলাকায় এখন কেউ বাইরে থেকে ঢুকতে পারবেন না, এলাকার কেউও বাইরে যেতে পারবেন না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী দেখা গেছে, বৃহত্তর সিলেটের চার জেলা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের প্রায় শতাধিক এলাকার বাসিন্দারা করোনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তাঁদের এলাকায় ঠেকাতে ‘স্বেচ্ছায় লকডাউনে’ গিয়েছেন। এর বাইরে পুরো হবিগঞ্জ জেলাকে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার বেলা চারটা থেকে বিভাগের অন্যান্য জেলা ও দেশের অপরাপর অঞ্চল থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করে ফেলা হয়েছে। এখন আর বাইরের কাউকে হবিগঞ্জ জেলায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হবিগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিভিন্নসূত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় করোনা সংক্রমণের রোগী শনাক্ত হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন এলাকাটি গত রবিবার রাত থেকে লকডাউন করে দিয়েছে। আর সিলেটের অন্যান্য এলাকাগুলো স্থানীয় সচেতন মানুষেরাই ‘স্বেচ্ছায় লকডাউন’ করে রেখেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের আম্বরখানা মণিপুরিপাড়া, ঘুর্ণি আবাসিক এলাকা, কমলাবাগান মজুমদারী এলাকা, লামাবাজার মণিপুরিপাড়া, সুবিদবাজার, লন্ডনী রোড, বড়বাজার, নয়াসড়ক, মিশনগলি, কলাপাড়া, আখালিয়া ব্রাহ্মণশাসন এলাকাসহ বেশকিছু এলাকার বাসিন্দা পাড়ার রাস্তা আটকে দিয়ে কাগজে লিখে রেখেছেন ‘লকডাউনএলাকা’।
একই সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে স্থানীয়রা স্বেচ্ছায় ‘লকডাউন’ করে রেখেছেন নিজেদের এলাকা। নিজেদের এলাকায় প্রবেশের পথে বাঁশ বেঁধে স্থানীয়রা যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। এলাকাগুলো হচ্ছে পৌর শহরের দাড়িপাতন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরি মোকাম মহল্লা ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের হেতিমগঞ্জ। মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার জায়ফর নগর, ভোগতেরা, বাছিরপুর, হালগরা, উত্তর জাঙ্গিরাই, বড়মাধাই, পাতিলা সাঙ্গন, দ্বহপাড়া, জাঙ্গালিয়া, এরালিগুল, চাটেরা ও কচুরগুল গ্রামের বাসিন্দারা গতকাল মঙ্গলবার থেকে স্বেচ্ছায় ‘লকডাউনে’ গিয়েছেন। একই জেলার বড়লেখা উপজেলার পাখিয়ালা, হিনাইনগর, তেলিগুল, ঘোলসা ও রুকনপুর গ্রামের বাসিন্দারা ‘স্বেচ্ছা লকডাউনে’ গিয়েছেন। কমলগঞ্জ উপজেলায় উত্তর পতনউষা, সবুজবাগ, শিংরাউলী, মাঝেরগাঁও, শিমুলতলা, তেতইগাঁও, ঘোড়ামারা, পশ্চিম কান্দিগাঁও, আলনগরচা-বাগান, উত্তরতিলকপুর, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি ও কমলগঞ্জ পৌরসভার আলেপুর ও চন্ডীপুরগ্রাম ‘স্বেচ্ছা লকডাউনে’ রয়েছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার লেঞ্জাপাড়া এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বক্তারপুর ওদিরাই উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের বাসিন্দারাও ‘স্বেচ্ছা লকডাউনে’ রয়েছেন। এর বাইরেও চার জেলার আরও বেশকিছু এলাকার মানুষ ‘স্বেচ্ছা লকডাউনে’ রয়েছেন।
স্বেচ্ছা লকডাউনে যাওয়া এলাকার মানুষজন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে হারে করোনোভাইরাসের রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, সেটি দেখে নিজেদের সুরক্ষা করতেই এলাকার সবার সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতেই স্বেচ্ছা লকডাউনে যাওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এলাকাতে বগিরাগতদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেজন্য বাঁশ কিংবা গেটের সাহায্যে ব্যারিকেড তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার কাউকেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু এলাকায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হলেও স্থানীয়রা কেউ কেউ এটি না মেনে বাইরে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র সিলেট নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকা ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ হতে কোথাও ‘লকডাউন’ করা হয়নি। প্রশাসন কেবল সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছে। কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাসার বাইরে না বেরোন, সে অনুরোধ স্থানীয় প্রশাসন করছে। কেউ অযথা বাসার বাইরে বেরোলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো কোনো এলাকার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগেই নিজেদের এলাকা ‘লকডাউন’ করে রাখছেন।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলার প্রবেশ মুখে চারটি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। এ জেলা থেকে কাউকেই বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছেনা এবং কাউকে জেলার ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা লকডাউন নয়, মূলত জেলাকে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করোনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেকটাই ঠেকানো যাবে বলে আমরা মনে করছি।’
এস-০১/এএফ-০২