নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ০৭, ২০২০
০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৭, ২০২০
১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
করোনোভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে বাসার বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে। তাই অনেকেরই কাটছে এখন ঘরবন্দী জীবন। সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে এলেও সচেতন মানুষ বাসা থেকে বেরোচ্ছেন না। এ অবস্থায় পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ীদের কদর অনেকটাই বেড়েছে। এসব ব্যবসায়ীরা পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন গলিতে ঠেলাগাড়িতে সবজির পসরা সাজিয়ে হাঁক ছুঁড়ছেন, ‘সবজি লাগব নি, সবজি?’ বাসা থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে বিশেষত নারীরা পছন্দমতো সবজি কিনে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরের সোনারপাড়া, কুমারপাড়া, ঝরনারপাড়, সেনপাড়া, রায়নগর, দর্জিপাড়া, লামাপাড়া, শাপলাবাগ, সাদিপুর, করেরপাড়া, হাওলদারপাড়া, ব্রাহ্মণশাসন, নেহারিপাড়া, বাগবাড়ি, শামীমাবাদ, পনিটুলা, বনকলাপাড়া, লন্ডনী রোড, উপশহর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, কামালগড়, বারুতখানা, সুবিদবাজার, বিলপাড় ও ছড়ারপাড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঠেলাগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করছেন। আলু, লাউ, কুমড়ো, ডাঁটা, গাজর, ফুলকপি, বাধাকপি, শালগম, লতা, বেগুন, পেঁপে, ঢেঁড়স, মূলা, শিম, ব্রুকলি, কাঁচা মরিচ, শসা, লেবু, ধনে পাতাসহ নানা ধরনের সবজি রয়েছে। পাশাপাশি পুঁইশাঁক, লাল শাঁক, লাউ পাতা, নালিয়া পাতাসহ নানা ধরনের শাঁক বিক্রি হতেও দেখা গেছে।
নগরের পশ্চিম পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা ইসমত আরা বলেন, ‘সবজি শেষ হয়ে গেছে। এরপরও করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় বাচ্চার বাবাকে (ইসমত আরার স্বামী) বাজারে পাঠাচ্ছি না। আলুসহ টুকটাক যা আছে, তাই খাচ্ছি। আজ (গতকাল) বাসার সামনে দেখি সবজিওয়ালা হাঁক দিচ্ছে। তাই শুনে নিচে নেমে এসে কিছু সবজি কিনে নিই। কেনা সবজিগুলো দিয়ে মোটামুটি সপ্তাহখানেক চলে যাবে। তবে দাম একটু বেশি ছিল।’ শামীমাবাদ এলাকার চল্লিশোর্ধ্ব গৃহিণী শামীমা পারভীন জানান, তাঁদের এলাকায় নিয়মিতই ভ্রাম্যমাণ সবজি ব্যবসায়ী আসেন। এতে বাসার সামনে থেকেই সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি যথাযথভাবে পালন করেই সবজি কেনা যায়। এতে করে সবজি বাজারে গিয়ে আর পরিবারের সদস্যদের শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করতে হচ্ছে না। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ মাছ ব্যবসায়ীরাও আসে। নিজের বাসার সামনে থেকে মাছ-সবজি কিনতে পারায় ঘরের বাইরে আর কাউকে যেতে হচ্ছে না।
নগরের বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন গৃহিণী অভিযোগ করেছেন, করোনোভাইরাস শুরুর আগেও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা পাড়া-মহল্লায় সবজি ও মাছ বিক্রি করতেন। বাজারমূল্যের চেয়ে এসব ব্যবসায়ীরা খুব একটা বেশি দাম হাঁকতেন না। তবে এখন এই সময়টাতে সবজি ও মাছের দাম বেশি হাঁকছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। তবে মানুষের ভিড়ে গিয়ে বাজারসওদা করতে হবে না, এমন সুবিধার কারণে এই বাড়তি দাম অনেকেই মেনে নিচ্ছেন। যদিও দুজন সবজি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাজারমূল্যের চেয়ে তাঁরা দাম বেশি রাখছেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাইকারি বাজারেই সবজির দাম বেড়ে গেছে। তাই তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। ব্রাহ্মণশাসন এলাকায় কথা হয় মোছাব্বের মিয়া নামের এক সবজি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দাম বেশি রাখছি না। বাজারে যে সবজির দাম কেজি প্রতি ৩০ টাকা, সেটা আমি রাখছি ২ থেকে ৩ টাকা বেশি। লেবুর দাম একটু বেশি বেড়েছে, তাই এটা বেশি দামে বেচা হচ্ছে।’
বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি চাকুরিজীবী নিহার রঞ্জন দাশ বলেন, ‘সরকার ছুটি ঘোষণার পরপর বাসাতেই সময় কাটাচ্ছি। ছুটি শুরুর আগে বেশকিছু সবজি কিনে ফ্রিজে রেখেছিলাম। সে সবজি শেষ হয়েছে বেশ আগেই। কিন্তু করোনোর ভয় আর আতঙ্গে এবং পরিবারের সদস্যদের অনাগ্রহের কারণে বাসার বাইরে বেরোইনি। আজ (গতকাল) হঠাৎ করেই দেখলাম, একজন ভ্রাম্যামাণ সবজি ব্যবসায়ী আমাদের বাসার গলিতে ঢুকেছেন। পরে তাঁর এখান থেকেই সবজি কিনে নিলাম। ওই সবজিব্যবসায়ীকে বলেছি, দুই দিন পরপর যেন সে আমাদের গলিতে আসে এবং আমাকে সবজি দিয়ে যায়। দাম সামান্য বেশি হলেও ঘরে বসেই সবজি পাচ্ছি, এটা মন্দ না!’ তবে করোনোভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখে সবজি কিনে তিনি প্রথমে পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তৈরি স্প্রে শেষে পানি দিয়ে ধুয়ে তবেই সবজি বাসার ভেতরে ঢুকাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
খায়রুল ইসলাম নামের এক সবজি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি বাগবাড়ি ও শামীমাবাদ এলাকায় সচরাচর সবজি বিক্রি করে থাকেন। অন্যান্য সময়ে যেখানে তিনি গড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার সবজি বিক্রি করতেন। এখন তিনি গড়ে হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারছেন। করোনাভাইরাস শুরুর সময়টাতে যখন সরকার সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিল, তখন তাঁর বেচাকেনা একেবারেই কমে গিয়েছিল। এখন গত চার থেকে পাঁচদিন ধরে বেচাকেনা বেড়েছে। এখন মোটামুটি তাঁর ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
এস-০১/এএফ-০১