বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর প্রতিনিধি
আগস্ট ০৭, ২০২৫
০৪:১০ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ০৭, ২০২৫
০৪:১৫ অপরাহ্ন
ওসমানীনগরে জোর করে স্বাক্ষি বানিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রবাসীর মামলা
লুৎফুর রহমান ওরফে নেপুর মিয়া থাকেন যুক্তরাজ্যে। কিছুদিন পরপর দেশে আসা-যাওয়া করেন। দেশে আসলে কারো সাথে মতের অমিল বা ঠুনকো ঝামেলার সৃষ্টি হলেই মামলা ঠুকে দেন। প্রতিবেশী মতাহির আলীর সাথে জমিজমা ও পূর্ব শত্রতার জের ধরে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বিরোধ সৃষ্টি করে আসছেন বলে নেপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের লতিবপুর গ্রামে মতাহির ও নেপুরের বাড়ির অবস্থান পাশাপাশি । সম্প্রতি নেপুর ও তার লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মতাহিরের ছেলে ইমরুল ইসলাম ওসমানীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে নেপুরসহ সিলেট সদর এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে ফরিদ আহমদ ও নেপুরের ছেলে জাফর ইমামকেও অভিযুক্ত করা হয়। ইমরুলের দেয়া অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারেন নেপুর। ইমরুলসহ মুক্তার খা, লোকমান খা, আব্দুল কালাম ও আব্দুল সালামের বিরুদ্ধে ঘরের আসবাবপত্র চুরি ও টাকা-পয়সা দাবির অভিযোগে ৪জুন ঘটনার তারিখ উল্লেখ করে থানায় পাল্টা লিখিত অভিযোগ দেন নেপুর।
নেপুরের লিখিত অভিযোগে একমাত্র স্বাক্ষি লতিবপুর গ্রামের ছিদ্দেক আলীর ছেলে ফকরুল ইসলাম। ফকরুল স্বাক্ষরিত ২৪জুন গ্রামবাসীর কাছে দেওয়া লিখিত অঙ্গিকার ও এফিডিভিটের মাধ্যমে তিনি বলেছেন, ২২জুন নেপুরের ছেলে জাফর ইমাম, ফরিদ আহমদসহ আরও ২জন জোর করে তাকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যায়।
অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোর করে মামলার কাগজে স্বাক্ষি হিসেবে স্বাক্ষর নেয়া হয়। যাদের বিরুদ্ধে তাকে স্বাক্ষি করা হয়েছে, তারা নির্দোষ। তারা এধরণের কোনো ঘটনার সাথে জড়িত নয়।
ইমরুলের অভিযোগ, স্বাক্ষি অঙ্গিকার দেওয়ার বিষয়টি জানার পরও এএসআই সাইদুর রহমান আর্থিক ফায়দা নিয়ে নেপুরের অভিযোগটি জিডি করে আদালতে প্রসিকিউশন দেন। এসআই ওমর ফারুক তার প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে তার দেওয়া অভিযোগের কোনো অগ্রগতি করেননি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এএসআই সাইদুর রহমান বলেন, ভূমি নিয়ে বিরোধ তাই অভিযোগটি আদালতে পাঠানা হয়েছে। আর এসআই ওমর ফারুক বলছেন, এটা অগ্রগতির কিছু নেই, তারা চাইলে আদালতে মামলা করুক।
নেপুরের এমন কাণ্ডে হতবাক গ্রামবাসী। তারা জানিয়েছেন, নেপুর তার ঘরের আসবাবপত্র চুরির যে অভিযোগ থানায় দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। আমরা দেখেছি, গত বছরের ২৩জুন নেপুরের ছেলে জাফর ইমাম ও ফরিদ লোকজন নিয়ে এসে আসবাবপত্র ও মালামাল গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছেন। মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করাই তার নেশা।
থানায় ইমরুলের দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, পূর্ব বিরোধের জেরে তার পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছেন নেপুর। কিছুদিন পরপর ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে বাড়ি দখল নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
১১জুন নেপুর, ফরিদ ও জাফর ইমাম দলবল নিয়ে ইমরুলের বাড়িতে উঠে ইমরুলসহ ঘরে থাকা লোকজনকে গালাগালি ও প্রানণাশের হুমকি দিয়ে বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। এতে ইমরুল ও তার পরিবার জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ইমরুলের লিখিত অভিযোগে নেপুর ও তার ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
এবিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০২০সালে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় দায়ের করা মাদক ও চোরাচালান মামলার এজাহারে নেপুরের ছেলে জাফর ইমাম অভিযুক্ত ছিলেন। নেফুরের বিরুদ্ধে ভূমি জালিয়াতি ও ভাড়াটে বাদী দিয়ে অপহরণ মামলা করিয়ে নিরিহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ করেছেন গ্রামের লোকজন।
নেপুর বিগতদিনে জাল দলিলের মাধ্যমে বালাগঞ্জ উপজেলার জনৈক নারীর ভূমি দখল নেন। ১৯৯৬ সালে ওই নারীর দায়ের করা মামলায় (সিআর মামলা নং-১৯/৯৬) সিআইডি ও দুর্নীতি দমন ব্যুরোর তদন্ত প্রতিবেদনে জালিয়াতির ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় নেপুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
গোপনে তিনি লন্ডন চলে গেলে ১৯৯৮ সালের ২৫জুন তার যাবতীয় মালামাল ক্রকের আদেশ হয়। নেপুরের ভূমি দখলের দলিলটি যে জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে তা না জেনেই স্বাক্ষিরা স্বাক্ষর করে ফেঁসে যান। পরবর্তী সময়ে জালিয়াতির ঘটনাটি জানতে পেরে বিবেকের তাড়নায় তদন্তের জেরার মুখে স্বাক্ষিরা সত্য প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন নেপুর। প্রতিশোধ নিতে নেপুরের বাড়ির কাজের লোককে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখেন। কাজের লোকের স্ত্রীকে দিয়ে জাল দলিলের স্বাক্ষি ইমরুলের পিতা মতাহির আলীসহ ৭জনের বিরুদ্ধে ১৯৯৯সালের ২১জুন বালাগঞ্জ থানায় অপহরণ মামলা করান নেপুর।
ওই বছরের ১১ডিসেম্বর নেপুরের এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে ওই কাজের লোককে উদ্ধার করে পুলিশ। কথিত বাদী আদালত স্বীকারোক্তি দেন নেপুরের প্ররোচনা ও আর্থিক বিনিময়ে তিনি এই মামলাটি করেছিলেন।
উছমানপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য জিলু মিয়া ও স্থানীয় মুরব্বী নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক বছর ধরে ভূমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইমরুলের পরিবারের সাথে নেপুর মিয়া ইচ্ছাকৃত বিরোধ সৃষ্টি করে আসছেন। নেপুর গ্রামের পঞ্চায়েতের সাথে নেই। তিনি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কোনো সিদ্ধান্ত না মেনে ইমরুলের পরিবারকে মামলা দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করছেন।
গোলাম লুৎফুর রহমান ওরফে নেপুর মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পারিবারিক বন্টনে পাওয়া আমার পৈত্রিক ভূমিসহ ক্রয়করা ভূমি তারা দখল করে রেখেছে। তাদের কারণে আমি বাড়িতে থাকতে না পেরে সিলেট শহরে বাসায় থাকছি।
জিসি / ০৭