সিলেট মিরর ডেস্ক
জুলাই ০৪, ২০২৪
১২:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৪, ২০২৪
১২:৪৯ অপরাহ্ন
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার। এতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টির মধ্যে। তবে বিভিন্ন জরিপের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে রেকর্ড ব্যবধানে জয় পেতে যাচ্ছে লেবার পার্টি।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মোট আসন ৬৫০টি। সার্ভেশনসের সেন্ট্রাল সিনারিওর তথ্য অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৪৮৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা দলটির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ারের আমলের ৪১৮টি আসনে জয়ের থেকেও বেশি।
১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটি মাত্র ৬৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা হতে পারে দলটি প্রতিষ্ঠার পর সর্বনিম্ন আসনে জয়। ১৮৩৪ সালে কনজারভেটিভ দলের জন্ম হয়। তাছাড়া ডানপস্থি রিফর্ম ইউকে পার্টি জিততে পারে ৭ আসনে।
প্রায় দেড় মাসের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে দেশজুড়ে স্থানীয় সময় আজ সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এই নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিসহ ছোট-বড় অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ এই নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে গত ২২ মে আকস্মিক আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। যদিও ২ মে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনের পর লেবার পার্টি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। নির্বাচনে প্রধান দলগুলো জনমত নিজেদের দিকে টানতে চলমান সমস্যার সমাধানে ও সুসংহত যুক্তরাজ্য গড়ে তুলতে নির্বাচনী ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময় থেকে যুক্তরাজ্যের ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যাসহ সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনগণ বেশ বিরক্ত। তা ছাড়া টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিও আস্থা রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ।
এমন বাস্তবতায় পরিবর্তনের সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লেবার পার্টির কাছে আত্মসমর্পণ না করতে বলেছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঋষি সুনাক বলেন, লেবার পার্টির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বলা হলেও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি একদম হাল ছেড়ে দেননি।
২০১০ সাল থেকে টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। এ দলের অবস্থা নড়েবড়ে। আর মে মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ফুরফুরে মেজাজে থাকা আত্মবিশ্বাসী লেবার পার্টি জাতীয় নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী।
লেবার পার্টির পরিবর্তনের ডাকের সঙ্গে জনগণও যে পরিবর্তন চান, সেটির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনী জনমত জরিপগুলোতে। সবশেষ জনমত জরিপে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে লেবার পার্টি। লেবার পার্টি থেকে ১৯ পয়েন্ট কম, তথা ২১ পয়েন্টে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ভালো ফলাফল করলেও নির্বাচনী জরিপে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে রিফর্ম ইউকে।
নির্বাচনী প্রচারণায় লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার বলে আসছেন, ক্ষমতায় গেলে অর্থনীতি পুনর্গঠন, স্বাস্থ্যসেবাকে গতিশীল করা, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, স্কুলগুলোতে আরও শিক্ষক নিয়োগসহ অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা না পাঠিয়ে নিজ নিজ দেশে পাঠাবেন। স্টারমার কনজারভেটিভ পার্টির টানা ১৪ বছরের ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ থেকে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য ৪ জুলাই লেবার পার্টিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও তাদের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ, লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্ন গণমাধ্যমের নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন নানা প্রশ্নের।
গত ২৭ জুন ডেইলি সানের এক বিতর্কে অংশ নিয়ে লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। পরবর্তীকালে লেবার পার্টির ব্যাখ্যায়ও প্রশমিত হয়নি বাংলাদেশি কমিউনিটির ক্ষোভ। যুক্তরাজ্যের একটি বাংলা গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টারমার বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আঘাত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না এবং এই ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত বলে জানান।
৯ নারীসহ মোট ৩৪ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বর্তমান এমপি রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক, আপসানা বেগমসহ লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন আটজন। তাঁদের প্রত্যেকের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে প্রথমবার মন্ত্রিসভায়ও স্থান পেতে পারেন কোনো কোনো ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি।