সেহরি খেয়ে ঘুম থেকে চিরঘুমে সন্তানসহ বাবা-মা

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ১০, ২০২৪
০৮:৪৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১০, ২০২৪
০৮:৪৯ অপরাহ্ন



সেহরি খেয়ে ঘুম থেকে চিরঘুমে সন্তানসহ বাবা-মা


জিলহজ মাস তাই রোজা রাখবেন বলে সেহরি খেয়ে ভোরে ঘুমাতে গিয়েছিলেন সিলেট নগরের মেজরটিলা এলাকার চামেলীবাগ এলাকার বাসিন্দা আগা করিম উদ্দিন (৩১) ও তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার (২৬)। সঙ্গে তাদের দেড় বছরের ছেলে নাফজি তামিম। কিন্তু কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তাদের সে ঘুম চিরঘুমে রূপ নেবে সেটা ভাবেননি পরিবারের কেউ। তাই টিলা ধসে এ মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ।

নিহত করিম চামেলীবাগের বাসিন্দা মৃত আগা রফিক উদ্দিনের ছেলে। 

পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতিকে হারিয়ে অনেকটা নির্বাক ইয়াছমিন বেগম (৫৫)। তিনি বলেন, ‘আমার ফুয়ায় রোজা রাখছিল। সাহ্‌রি খাইছে, ইফতার করতে পারল না আর ফুয়াটায়। এর আগেই আল্লাহই তারে লইয়া গেলাগি।’ কথাগুলো বলছিলেন আর কাঁদছিলেন এই মা।

এ সংক্রান্ত পূর্বের সংবাদ-

মেজর‌টিলায় টিলা ধসে প্রাণ গেল একই পরিবারের ৩ জনের

ইয়াছমিন বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে রহিম উদ্দিন বড় এবং করিম উদ্দিন ছোট। করিম সিলেট নগরের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেন। দুই ভাই আলাদা থাকলেও দুই পরিবারের মধ্যে মিল ছিল। ইয়াছমিন বেগম বড় ছেলের ঘরে থাকলেও ছোট ছেলের ঘরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন।

ইয়াছমিন বেগম বলেন, আজ সকাল সাতটার আগে তিনি বড় ছেলের ঘর থেকে দুই নাতিকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছিলেন। ঘরে তখন বড় ছেলে আগা রহিম উদ্দিনের ছয় মাসের মেয়ে, রহিমের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৩০)। অন্য ঘরে ছিলেন আগা করিম উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী শাম্মী আক্তার ও দুই বছরের শিশু। সকাল সাতটার দিকে হঠাৎ ‘শাঁ শাঁ’ শব্দ পান ইয়াছমিন বেগম। এ সময় তিনি ঘরে ঘুমিয়ে থাকা সবাইকে ডাকতে গেলে ঘরের ওপর টিলার মাটি ধসে পড়ে। তখন বড় ছেলের স্ত্রী অক্ষত অবস্থায় ঘর থেকে ছোট শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারলেও বড় ছেলে রহিম উদ্দিন মাটির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে গিয়ে রহিম উদ্দিনকে উদ্ধার করেন। তবে ছোট ছেলে করিম উদ্দিনের ঘরের কাউকেই উদ্ধার করতে পারেননি।

এদিকে টিলার মাটিচাপা পড়ে ঘরটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। মাটির নিচে চলে গেছে ঘরের চালসহ দেয়াল। টিলা ধসে আশপাশের আরও তিনটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার পর সকালে স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে সিলেট সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন। দুপুর ১২টার দিকে যোগ দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে বেলা দেড়টার দিকে মাটির নিচ থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোর থেকেই সিলেট নগরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। এতে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের চামেলীবাগ এলাকার একটি টিলাধস হয়। এ সময় টিলার পাশের টিনশেডের একটি ঘর মাটির নিচে চাপা পড়ে।

সিলেট মহানগরের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধারের পর পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।


এএফ/০৬