চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলতেই জেল হত্যাকান্ড: সৈয়দা জেবুন্নেছা

সিলেট মিরর ডেস্ক


নভেম্বর ০৩, ২০২৩
০৮:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৩, ২০২৩
০৮:১০ অপরাহ্ন



চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলতেই জেল হত্যাকান্ড: সৈয়দা জেবুন্নেছা


জেলহত্যা দিবসের আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক বলেছেন, ‘ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা।‘ জেল হত্যা দিবসকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গভীর পরিতাপের বিষয়, সমগ্র বিশ্বে কারাগার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান বলে সর্বজন স্বীকৃত, সেই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতাকে চরম নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে’?

আজ শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে জেল হত্যা দিবসের আলাচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা জেবুন্নেছা এসব কথা বলেন।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০ টায় সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং জাতীয় চার নেতার ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী'র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় জেল হত্যা দিবসের উপর বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। 


জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা জেবুন্নেছা হক বলেন, ‘১৫ আগস্টের ন্যায় ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকান্ড এদেশের ইতিহাসে আরেক কালো অধ্যায়। বাঙালি জাতির ইতিহাসে জেল হত্যাকান্ড আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়। গভীর পরিতাপের বিষয়, সমগ্র বিশ্বে কারাগার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান বলে সর্বজন স্বীকৃত, সেই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে যাঁরা মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে, এ দেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন, সেই জাতীয় চার নেতাকে চরম নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে ‘

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা এ দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি এই চক্রটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে। এরপর খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।’

জেবুন্নেছা হক বলেন, ‘ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। এজন্যই তারা জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিশ্বস্থ সহচর যে জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে ও নির্দেশে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এ দেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন, সেই জাতীয় চার নেতাকে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বর কারাগারের ভেতরে রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হয়।’

চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মুছে ফেলতে এ ঘৃণ্য কাজ করা হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম আজ স্বাধীনতার মহান চেতনায় উজ্জীবিত।’

সভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা বারের পিপি অ্যাডভোকেট মো. নিজাম উদ্দিন।


আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম কামাল, মোহাম্মদ আলী দুলাল, কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, সাইফুল আলম রুহেল, অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমল আলী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুক আহমদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সৈয়দ এপতার হোসেন পিয়ার, দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন, বন ও পরিবেশ  বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাক আহমদ পলাশ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম সামসুন্নাহার মিনু, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন আহমদ, শিল্প ‍ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. মজির উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আখলাকুর রহমান চৌধুরী সেলিম, আবদাল মিয়া, অ্যাডভোকেট বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, এম কে শাফি চৌধুরী এলিম, আবু হেনা মো. ফিরোজ আলী, আমাতোজ জোহরা রওশন জেবিন, মো. জাকির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, গোলাপ মিয়া, ড. নাজরা আহমদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. নাজমুল উল্যা, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এজাজুল হক এজাজ, সাধারণ সম্পাদক শামীম রশিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল কান্তি দাস, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজিরা বেগম শীলা, সাধারণ সম্পাদক হাকীম দিনা আক্তার।

এর আগে সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এমাদ উদ্দিন মানিক।  সভা শেষে জাতীয় চার নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। 


এএফ/০৮