মঞ্জুর শাফি চৌধুরী এলিম
অক্টোবর ১২, ২০২৩
০৫:৪২ অপরাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১৩, ২০২৩
০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
মনের ভাব প্রকাশের অনেক মাধ্যম রয়েছে। আমরা কথা বলি, ইশারা করি বা আকার ইঙ্গিতেও একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারি। তবে সবচেয়ে সহজ ও সাবলীল মাধ্যম হচ্ছে কথা বলা—যেখানে আমরা ভাষার প্রয়োগ দেখতে পাই।
পৃথিবীতে বর্তমানে সাড়ে ছয় হাজারের অধিক ভাষার ব্যবহার আছে। ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত ২০২০ সালের এক তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে ভাষার সংখ্যা ৭১১১টি। আমরা বাঙালি এবং বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। জন্মের পর থেকেই আমরা বাংলা আয়ত্ত করি। বাংলাদেশের সব অঞ্চলের ভাষা এক না হলেও বই পুস্তক বা শুদ্ধ বাংলা আয়ত্ত করা খুব কঠিন কাজ নয়। মাতৃভাষার দিক থেকে আমরা পৃথিবীতে চতুর্থ হলেও বিশ্বের প্রথম সারির ভাষা ইংরেজি। একজন মানুষ মাতৃভাষা যত দ্রুত এবং সাবলীলভাবে আয়ত্ত করতে পারে, দ্বিতীয় কোনো ভাষা তত সহজে আয়ত্তে আনতে পারে না।
তবে আয়ত্তে আনা অসম্ভব কিছু না। নতুন কিছু শিখতে হলে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এবং ক্রমাগত অনুশীলন প্রয়োজন। কথায় আছে শেখার কোনো বয়স নেই। কিন্তু তাই বলে সঠিক সময়ে সঠিক পরিস্থিতিতে অর্জিত শিক্ষার যে প্রভাব তা উপেক্ষা করা যাবে না। আমাদের আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ এবং তারাই আমাদের দেশকে বিশ্ব মানচিত্রে সমৃদ্ধিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরবে আর যে ভাষাটি সারা বিশ্বে অবাধ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় তা হল ইংরেজি ভাষা।
শত শত বছর ধরে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বিশ্বের অনেক বৃহত্তম ব্যবসা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধান ভাষা হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাতৃভাষার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজি চর্চা করা হয়, এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজির চর্চা আছে। ইংরেজি শিখে এবং দক্ষতা অর্জন করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের দেশে ছাত্র ছাত্রীরা একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে। ইংরেজির মাধ্যমে আমরা যেমন নিজেদের শিক্ষা সংস্কৃতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারি, তেমনি নতুন সংস্কৃতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারি।
ইংরেজি শিক্ষা আমাদের সামনে উন্নয়নের নতুন দ্বার তৈরি করে দিতে সাহায্য করে। এই আধুনিক বিশ্বে একটি জনপ্রিয় শব্দ হচ্ছে Global Village বা বৈশ্বিক গ্রাম। পৃথিবীটা এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। সবার হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন এবং বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস আছে যার ভাষা ইংরেজি। পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ইংরেজি শেখা আবশ্যক। এবার আসি ইংরেজি শেখার সহজ পন্থা কি। যে কোনো ভাষা শিখতে হলে প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয়ে দখল রাখা ভালো যেমন grammar, vocabulary, pronunciation ইত্যাদি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি গ্রামার শিখার আগে vocabulary সমৃদ্ধ করা বেশি জরুরি। যার vocabulary যত rich, তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা তত সহজ হয়ে যায়। vocabulary বা ইংরেজি শব্দ ভান্ডার জানা থাকলে broken English দিয়ে ও কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।
আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ অর্জিত হয় শ্রমবাজার থেকে। বাংলাদেশিরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে অনবদ্য অবদান রাখছেন। ইংরেজি ছাড়া ইউরোপ আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।
আশির দশকে যখন আমেরিকায় পাড়ি জমালাম তখন ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছি। বিশেষ করে vocabulary জানার গুরুত্ব। পৃথিবীর সকল দেশেরই নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তথাপি তারা ইংরেজি জানে। বাংলার সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা স্মার্ট শিক্ষিত জনগোষ্টি ছাড়া কি সম্ভব?
আমাদের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তুলতে হবে। আর এ জন্যে ভোকাবুলারির চর্চা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখার জন্য আগ্রহী করে তুলতে হবে। মেধার জন্ম সকল পরিবারেই হয় আবার পরিবারের সকল সন্তান সমান মেধাবী হয় না। আমাদের সন্তানদের শুধু গতানুগতিক শিক্ষা নয়, তাদের মেধা অনুযায়ী ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা এবং ব্যবহারিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে যেন তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে আমাদের আধিপত্য বিস্তার করতে হবে আর এ জন্যে কর্মদক্ষতার পাশাপাশি ইংরেজি শব্দ ভাণ্ডার আয়ত্ত করতে হবে।
আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে যখন প্রত্যাশিত মানের ইংরেজি ভাষা জ্ঞান পাই না তখন মনটা ব্যথায় ভরে উঠে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম ইংরেজির ভিত খুবই দুর্বল। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ে পঠন-পাঠন আশানুরূপ নয়। তাই ভোকাবুলারি কম্পিটিশনের মাধ্যমে ইংরেজি শেখার আগ্রহ সৃষ্টি এবং ইংরেজির প্রতি ভয় কাটানোর চেষ্টা করলাম।
আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমাদের সন্তানরা ইংরেজি শেখতে চায়। প্রয়োজন শুধু সঠিক গাইডলাইন। তাদেরকে ভোকাবুলারি আয়ত্ত করতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে যেমন শব্দ প্রতিযোগিতা বা ভোকাবুলারি কম্পিটিশনের আয়োজন করা। দৈনন্দিন জীবনেও তাদেরকে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার রপ্ত করাতে হবে।
ভাষা শিক্ষায় চারটি বিষয় রয়েছে, সেগুলো হলো ভাষা বলতে পারা, লিখতে পারা, ভাষা শুনে বুঝতে পারা এবং সর্বশেষ ভাষা পড়তে পারা। স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বই, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস তৈরি করে দিতে হবে। প্রয়োজনে reading competition এর আয়োজন করতে হবে। শ্রেণি পাঠের সঙ্গে ইংরেজি সমার্থক শব্দ synonym শেখাতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা vocabulary আয়ত্ত করতে পারলে পরবর্তী সময়ে যদি উচ্চশিক্ষা অর্জন না-ও করতে পারে তারপরও সে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ও কিছুটা কাজ করার সুযোগ হয়েছে সেখানেও একই অবস্থা। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে যখন শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায় তখন তারা ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে। সিলেটের নর্থ ইষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সামিল হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সেখানে ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুবাদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম ইংরেজিই তাদের প্রধান সমস্যা। তাই এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে ইংরেজি শেখার বিকল্প নেই। আমাদের সন্তানই আমাদের সম্পদ তাদের বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হলে ইংরেজি ভাষা জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি।
লেখক : উপজেলা চেয়ারম্যান, গোলাপগঞ্জ