অবশেষে নির্মিত হচ্ছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর’

মামুন পারভেজ


অক্টোবর ১২, ২০২৩
০৪:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০২৩
০৪:৩১ পূর্বাহ্ন



অবশেষে নির্মিত হচ্ছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর’
নকশা পছন্দেই পাঁচ বছর পার


খুব ভালো হয়, যদি প্রতি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের একজন প্রতিনিধি নিজ উপজেলার স্তম্ভের তলায় এক মুষ্টি মাটি এনে রাখেন।

-স্থপতি শাকুর মজিদ


অবশেষে নির্মিত হচ্ছে সিলেটের ৪ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের স্মারক নগরের কদমতলী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর। স্থপতি শাকুর মজিদের করা নকশায় নির্মিত হচ্ছে এ চত্বর। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের নির্মাণকাজ শুরু করেন ঠিকাদার রূপক দাশ। ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বাজেটের এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। 

এদিকে, নতুন এ নকশা পছন্দেই প্রায় ৫ বছর সময় নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০২২ সালের অক্টোবরে স্থপতি শাকুর মজিদের করা নকশা পছন্দ করে সিসিকের প্রকৌশল বিভাগ। এর আগে রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজের জন্য ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ভেঙে ফেলে সিসিক। এ সময় নকশা চেয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয় তারা। কিন্তু সে সময় নকশা পছন্দ না হওয়ায় চত্বরের কাজ শুরু করতে পারেনি সিসিক। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের ৪ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের স্মারক হিসেবে নির্মিত হচ্ছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, কদমতলী, সিলেট’। চত্বরে নকশায় ফুটে উঠেছে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে এ অঞ্চলের মানুষের অবদানের কথা। এ ছাড়া সিলেটের ভূমিরূপ, নান্দনিক প্রাকৃতিক অবস্থা এবং এ অঞ্চলের আদিভাষা নাগরিলিপিকেও স্মরণ করা হয়েছে ট্রায়াঙ্গেল কনসাল্ট্যান্টসের এ নকশায়। 

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করতে স্থাপনায় ৭১ ফুট ব্যাসের কেন্দ্র বরাবর ৭১ ফুট উঁচু ৪ বাহুর স্তম্ভ প্রণয়ন করা হয়েছে। চার মহকুমার (বর্তমানে জেলা) স্বাধীনতাকামীদের স্মরণে ৭১ ফুট উঁচু চার বেয়োনেট ও সরাসরি ৪ রাইফেল এসেছে ৪ জেলা থেকে। ৫২টি লাল রঙের রিং ৫২’র ভাষা আন্দোলনের প্রতীক। 

পাকিস্তানিদের দমন-পীড়নে এ অঞ্চলে ৪০ থানার মানুষের দুর্ভোগ ও ত্যাগ স্মরণে রাখতে প্রান্ত থেকে কেন্দ্রমুখি ফলক স্থাপন করা হয়েছে। এসব ফলতে ৪০ থানার নাম খচিত থাকবে। আবার যেহেতু এটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের প্রবেশমুখ তাই প্রত্যেক উপজেলার দূরত্ব খোদাই করে লেখা থাকবে চত্বরে। এ ছাড়া নাগরিলিপি ও বাংলায় লেখা রয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চত্বর’। 

এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এলইডি লাইটসহ ৮ প্রকারের বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক বাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

কদমতলী এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক বলেন, ‘চত্বরটি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত। এ স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমর হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। এ এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে সড়ক প্রশস্ত ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের জন্য মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ভেঙে ফেলে সিটি করপোরেশন। এর পর প্রায় ৫/৬ বছর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটি অবহেলায় অযত্নে ফেলে রাখে সিসিক কর্তৃপক্ষ। চত্বরের ভাঙা ও খোলা স্থানে ট্রাক ও লেগুনা ধোয়া-মোছার কাজেও ব্যবহার করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দেরিতে হলে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 

ঠিকাদার রূপক দাশ বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের কাজ আমরা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। আশা করছি মাসখানের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করতে পারব। 

এ বিষয়ে ট্রায়াঙ্গেল কনসাল্ট্যান্টসের প্রধান স্থপতি শাকুর মজিদ সিলেট মিররকে বলেন, সিলেটের ৪ জেলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিষয়টি সামনে রেখে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের নকশা করা হয়েছে। ৫২’র ভাষাআন্দোলনে এই অঞ্চলের মানুষের অবদানের কথা স্মরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটের ভূমিরূপ, নান্দনিক প্রাকৃতিক অবস্থা এবং এ অঞ্চলের আদিভাষা নাগরিলিপি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের নকশায়। 

তিনি আরও বলেন, এই স্মারক স্থম্ভকে কেন্দ্র করে ৪০টি কৌণিক স্তম্ভ দাঁড় করিয়ে রাখা আছে, যেগুলো ৪০ টি উপজেলার দিকে মুখ করা। যেহেতু কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এখানে অবস্থিত, তাই এখান থেকে উপজেলাগুলোর দূরত্বও দেখানো আছে। 

স্থপতি শাকুর মজিদ বলেন, খুব ভালো হয় যদি প্রতি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের একজন প্রতিনিধি নিজ নিজ উপজেলার স্থম্ভের তলায় এক মুষ্টি মাটি এনে রাখেন। বর্তমান মেয়র চাইলে তাঁর বিদায়ের আগে একটি অনুষ্ঠান করে এটা করতে পারেন। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের কাজ চলছে। অবকাঠামো নির্মাণ প্রায় শেষ। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে। 

নকশা পছন্দে কালক্ষেপণের বিষয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর ৬/৭ টি নকশা জমা পড়ে। কিন্তু নকশাগুলো আমাদের পছন্দ হয়নি। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব ও গর্বের বিষয়, তাই ভালো নকশার জন্য আমরা কিছুটা সময় নিয়েছি।


এএফ/০১