বাংলাদেশ জেনোসাইড ‘৭১ এর জাতিসংঘ স্বীকৃতির দাবিতে সিলেটে সমাবেশ

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ০৮, ২০২৩
০৩:১৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৮, ২০২৩
০৩:১৩ পূর্বাহ্ন



বাংলাদেশ জেনোসাইড ‘৭১ এর জাতিসংঘ স্বীকৃতির দাবিতে সিলেটে সমাবেশ


একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় নৃশংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ জেনোসাইডকে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ‘আমরা একাত্তর’ সিলেট জেলার উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার (৭ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

আইনজীবী সমর বিজয় সী শেখরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, তুহিন কান্তি ধর, খেলাঘর সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক তপন চৌধুরী টুটুল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মাশরুখ জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীনুর রহমান প্রমুখ। 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, তাঁদের রক্ত ও কান্নার এক বিশাল সমুদ্র থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্ম। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং তাদের স্থানীয় অনুচর রাজাকার-আলবদর সৃষ্ট নৃশংস জেনোসাইডকে প্রতিহত করে আমরা স্বাধীন মানচিত্র গড়েছি।’

তারা বলেন, ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নিষ্ঠুর অভিযানে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনারা বাংলাদেশের জনগনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একাত্তরের ডিসেম্বরে বাঙালি জাতির বিজয় অবধি যা অব্যাহত ছিল। এ সময়কালে প্রায় ত্রিশ লাখ বাঙালি নিহত হয়, পাকিস্তানি সেনা অভিযানে প্রাণ বাঁচাতে এক কোটি জনমানুষ দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়ে দুঃসহ শরণার্থী জীবনবরণ করেন। দুই কোটি  অভ্যন্তরীন বাস্তুচ্যূত হন। কয়েক লাখ নারী ধর্ষিত, যৌন অত্যাচারিত হন, প্রাণ হারায় অনেকে।’

বক্তারা যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের জনগণের হিন্দু ধর্মীয় সমাজের উপর এমন হামলা চালায় যেন তারা চিরতরে বাস্তুচ্যুত হয়।দেশের সুখ্যাত, মেধাবী, প্রতিভাদীপ্ত বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়। যেন স্বাধীন বাংলাদেশ মেধাশূন্যতার পঙ্গুত্ব বরণ করে। ব্যাপক হত্যালীলা, ধ্বংসযজ্ঞ, ধর্ষন আর জাতি-ধর্ম- বর্ণ-গোত্র বিধ্বংসী মানবিক বিপর্যয়ের সম্মিলিত রূপের নামই 'জেনোসাইড'।’

তারা বলেন, ‘পাকিস্তানী বাহিনী অভাবনীয় হত্যাকান্ডে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে রক্তমাতৃকে পরিণত করেছে। দেশ জুড়ে চিহ্নিত অচিহ্নিত অগণিত বধ্যভূমি। খুলনার চুকনগরে একাত্তরের ২০মে কয়েকঘন্টায় অবিরাম গুলিবর্ষনে দশহাজারেরও অধিক মানুষকে হত্যা করে হানাদার পাকিস্তান বাহিনী নিষ্ঠুরতার রেকর্ড গড়েছে। দীর্ঘকাল ধরে আমাদের সরকার, প্রতিবাদী জনসমাজ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, দেশ বিদেশের বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার ব্যক্তিবর্গ জেনোসাইডকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন । আমাদের বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ মার্চ  তারিখকে ‘জাতীয় জেনোসাইড দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে দিবসটি পালন করে আসছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় জাতিসংঘ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত মহাবিভীষিকার পর এ পর্যন্ত সংঘটিত সবচেয়ে বড় এই বাংলাদেশ জেনোসাইড নিয়ে এতটুকু রা-শব্দ করেনি। যা জাতিসংঘের মূলনীতির পরিপন্থী।’

বক্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তবুও  আশার কথা এই যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক  অধিবেশনের পার্শ্ব কর্মসূচীতে জেনোসাইড ইস্যু উঠে আসছে। আরও আশার কথা এই যে জেনোসাইড নিয়ে গবেষণা করে এমন বিশ্ব স্বীকৃত চারটি সংগঠন লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, জেনোসাইড ওয়াচ,ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসাইন্স (ICSC) সংগঠন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে পরিচালিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অকথ্য নির্যাতনকে  জেনোসাইড-মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিগত দু'বছরে বাংলাদেশের বিপুল স্থানে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে বড় বড় শহরে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে কৃত জেনোসাইডের জাতিসংঘ-স্বীকৃতির দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

বক্তারা দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এ ছাড়া ২০২৩ সালের ২৯-৩১ মার্চ তারিখে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ছবি ও দলিলপত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৭১ জেনোসাইড এর দৃশ্যপট তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী কমিশন এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আমরা দৃঢ়তার সাথে দাবী  করছি ,আমাদের কন্ঠস্বর উচ্চকিত করছি,ইতিহাসের কর্তব্য সম্পাদনের স্বার্থে প্রকৃত মানবাধিকার ও নীতিনিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে জাতিসংঘকে অনতিবিলম্বে ১৯৭১ এ বাংলাদেশে সংগঠিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিতেই হবে।’


এএফ/১৯