নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ০৬, ২০২৩
০১:৫০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ০৬, ২০২৩
০৬:৫২ অপরাহ্ন
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভিসামুক্ত সম্পর্ক চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি সময়েভারতের ভিসার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে যে পরিমাণ ভিসার আবেদন পড়ে সে অনুযায়ী তাদের জনবল নাই। তারা সক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা করছে। তবে আমি বলেছি, অদূর ভবিষ্যতে আমি চাই ভিসা মুক্ত বাংলাদেশ-ভারত।’
আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ ডায়লগের (সংলাপ) প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
ভিসা জটিলতা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় বলেন, ‘তারা (ভারত) প্রতিদিন পাঁচ থেকে নয় হাজার ভিসা ইস্যু করে। আমাদের হাজার হাজার লোক আবেদন করেন। কিন্তু তাদের এত জনবল নাই। তারা এই সক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা করছে। আর আমি বলেছি অদূর ভবিষ্যতে আমি চাই, ভিসা মুক্ত ভারত-বাংলাদেশ।’
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘শিলচরের পর এই ডায়লগ উভয় দেশের নানা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে খোলামেলা কথা হয়েছে। আপনারা শুনে খুশি হবেন, উভয় দেশের সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পেরেছি। প্রথম দিনে পাঁচটি প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছি। পাঁচটির একটি ইকোনমিক, আরও আরও বিনিয়োগ।’
তিনি বলেন, এ ছাড়া বিদ্যুৎ সমন্বয়ের কথা বলেছি। আমরা ভারত থেকে ১ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনি, আরও কিনতে চাই। নেপাল থেকেও এনার্জি কিনতে ভারত আমাদের সাহায্য করবে। তাছাড়া দেশের নদীগুলোর কথা বলেছি, যাতে উভয় দেশের সম্পর্ক আরও ভালো হয়। আগে নানা কারণে সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটতো। এখন সেগুলো কমেছে।
তিস্তার পানি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, নীতিগতভাবে আমরা এক। তবে তিস্তার পানি বণ্টন হবে। কিন্তু কোনো একটা কারণে এটা আটকে আছে, সেটা অজানা।
আজ বিকেলে সিলেটের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত ১১তম ফ্রেন্ডশিপ ডায়লগের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘দুই প্রতিবেশী দেশের ভাগ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং উভয় দেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তিনি জি২০ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান এবং পি২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার্স সামিট আয়োজনের জন্য ভারতের প্রশংসা করেন। তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশের সংসদের আরও সম্পৃক্ততা, নারী আইন প্রণেতাদের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা এবং আইসিটি সেক্টরে সহযোগিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের এই ত্যাগের কথা কখনো ভুলবে না।’ স্পিকার বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ সংলাপে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াবে।’ তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই নীতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে।’ স্পিকার বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে সংসদীয় সহযোগিতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারত পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ভিনসেন পালা, ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাস গুপ্ত, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
সাবেক মন্ত্রী ভিনসেন পালা বলেন, বাংলাদেশ ‘গুড গভর্নেন্স’ তৈরিতে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বর্তমান সরকার অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন নীতিতে কাজ করছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশ আগামীতে আরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, এবারের সংলাপে একটাই চাওয়া, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে কোনো জটিলতা যেন না থাকে। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক যেন ভিসাবিহীন হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইসিটি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মুনতাসীর মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ এস এম শামছুল আরেফিন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এ সংলাপের প্রথম দিনে আলোচনা সভায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এএফ/১৯